Activities
বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৩ভাগ মানুষ তামাক সেবন করে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রচারণা ও দুর্বল আইনের কারণে তামাকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তামাকের ব্যবহার কমাতে বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন সংশোধন হচ্ছে। জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. মুজিবুর রহমান ফকির এমপি উপরোক্ত কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি ও আইন কমিশন এর প্রাক্তন সদস্য ড. এম এনামুল হক, আন্তর্জাতিক সংস্থা দি ইউনিয়ন এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সভাপতি ও জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মুজাফফর হোসেন পল্টু।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, তামাকের কারনে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ, যক্ষা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায় ও প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। শুধু মানুষ অসুস্থ্যই হচ্চে না, মানুষের অর্থও অপচয় হয়। এছাড়া তামাকজনিত রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারেরও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বেড়ে যায়। তামাক কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ রাজস্ব দেয় তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়।
ড. এম এনামুল হক বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি থাকতে পারে। তবে তামাক কোম্পানির মত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, যারা প্রত্যক্ষভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে সেসব প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা দরকার। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। কারণ সমাজের মঙ্গলের জন্য যে কাজ করা হয় সে কাজের শতভাগ ব্যয় বাড়িয়ে প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য তামাক বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা। তাই সংসদ এলাকায় তামাক কোম্পানির অর্থে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য স্পিকারসহ সংসদ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। তামাক কোম্পানিগুলো আইনকে বাধাগ্রস্ত যেন না করতে পারে, সেদিকে গণমাধ্যম, সরকার ও তামাক বিরোধী জোটের কর্মীদের সতর্ক থাকা দরকার।
মুজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক চাষ ফসলি জমিকে ধ্বংস করছে। তামাক চাষের কারনে জমির উর্বরতাই শুধু কমে যায় না, এর ফলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করণের কাজে নির্বিচারে গাছ কাটতে হয়। এছাড়া তামাক চাষে সম্পৃক্ততার কারণে শিশু-নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাক কোম্পানির আগ্রাসন শুধু বান্দরবানসহ পার্বত্য এলাকায়ই নয়, এখন ঢাকার পাশ্ববর্তী মানিকগঞ্জেও ব্যাপকভাবে তামাক চাষ হচ্ছে। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত আইনটি দ্রুত সংসদে পাস করার দাবি জানান।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের টাস্কফোর্স কমিটিগুলো সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এখন আর বাসসহ পাবলিক পরিবহন কিংবা কোন অফিস-আদালতে সচরাচর ধূমপান করতে দেখা যায় না। তাই মানুষ রাস্তায়, বাইরে ধূমপান করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া এখন প্রত্যক্ষ বিজ্ঞাপনও দেখা যায় না। তবে বিদ্যমান আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে আইন লঙ্ঘন করছে। তাই তামাক কোম্পানি শাস্তির আওতায় এনে সংসদে দ্রুত সংশোধিত আইন পাস করা দরকার।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মূখপত্র সমস্বর-এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন-এর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর অনুষ্ঠান সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিলন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, সেভ দ্যা কোস্টাল পিপল (স্কোপ) এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন, র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক এটিএম শহিদুল ইসলাম, তামাক বিরোধী নারী জোট এর প্রতিনিধি সীমা দাস সীমু, পল্লী সেবা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম রিপন, সারডা’র নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।