নির্বাচনে তামাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি

দেশে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ/উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা/সিটি করপোরেশন) ও জাতীয় নির্বাচন হয়। এসব নির্বাচনে প্রচারণাসহ নানা কাজে কিশোর-তরুণদের একটা বড় অংশ সম্পৃক্ত থাকে, এদেরকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিড়ি-সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য প্রদান করতে দেখা যায়। নির্বাচনের পূর্বে এভাবে একমাস বিনামূল্যে তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির ফলে কিশোরা-তরুণরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ধূমপান বা তামাকের নেশা ক্রমান্বয়ে কিশোরদের অন্যান্য নেশার দিকেও ধাবিত করে। তাই আগামী প্রজন্মকে সুস্থ্য রাখতে হলে নির্বাচনী প্রচারণায় বিড়ি-সিগারেট বা তামাক প্রদান নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের দাবি জানানো হয়।

আজ ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট কর্তৃক জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা এ দাবি জানান। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে জানি এবং আইন মানি’। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন নাগরিক সমাজের প্রবীণ সংগঠক সৈয়দ আবুল মকসুদ, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দি ইউনিয়ন এর পরামর্শক ইশরাত চৌধুরী ও তামাক বিরোধী সম্মাননা ২০১২ প্রাপ্ত ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ ও প্রাণ গোপাল দত্তকে নিয়ে মানপত্র পাঠ করেন মানবিক উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন। সভা সঞ্চালনা করেন জোটের মূখপত্র ‘সমস্বর’ নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা ধূমপানের কারণে ফুসফুস ক্যান্সারে মারা যান। যেদিন তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে, সেদিনই তিনি ধূমপান ত্যাগ করেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।’ সবারই ব্যক্তিগত সুস্থ্যতার জন্য তামাক ও মাদকমুক্ত থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে তামাকের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। আইন লঙ্ঘণের দায়ে শাস্তিও দেয়া দরকার। আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষকে দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তামাক হচ্ছে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণ। তাই উন্নত দেশগুলো কঠোরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করছে। আগামী প্রজন্মকে নেশামুক্ত রাখতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে প্রচারণা বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ইতোপূর্বে আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিকভাবে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ধূমপানমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আমি আজকের এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবারও আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় সব ধরনের তামাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ জানাই। তামাক বিরোধী সম্মাননা ২০১২ গ্রহণের পর অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত আরও বলেন, যারা কাজ করে তারা কখনও স্বীকৃতি বা পুরস্কারের আশা করে না। তামাক বিরোধী জোট আমাকে আজ যে সম্মান দেখাল তা আমি অবনতমস্তকে গ্রহণ করলাম। এ সম্মান আমাকে অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি দায়বদ্ধতাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তরুণ প্রজন্মকে সুস্থ্য রাখতে নির্বাচনী প্রচারণায় তামাকের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ্য রাখতে, তামাকজনিত মৃত্যু কমিয়ে আনতে নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে তামাক বিরোধী বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানাই। ইশরাত চৌধুরী বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ করে কিশোর-তরুণদের ধূমপানের নেশায় আসক্ত করতে প্রচারণা চালায়। এ প্রবণতা প্রতিহত করতে আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক কোম্পানির জরিমানা ১ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানির অপপ্রচার প্রতিহত করতে আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও জোটের সংগঠনগুলোকে সতর্ক ও সোচ্চার থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস’ এর উপলক্ষে সারাদেশের ৭০০ বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-এর পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে “তামাক বিরোধী সম্মাননা ২০১২” প্রদান করা হয়। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ ও সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রাণ গোপাল দত্ত’র হাতে সম্মাননা ২০১২ (স্বর্ণপদক ও সম্মাননাপত্র) তুলে দেন। এ সময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রাণ গোপাল দত্তকে অভিবাদন জানান।