News
এসডিজি অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের উপর অধিক হারে কর বৃদ্ধির করতে হবে
পৃথিবীর যে সকল দেশের মধ্যে তামাক পণ্য সস্তা তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তামাক কোন মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় বরং স্বাস্থ্যহানীকর বিলাসবহুল পণ্য এবং এটি একটি পণ্য যা তার ভোক্তার মৃত্যু ডেকে আনে। কাজেই এধরনের পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিতকরণ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এর উপর উচ্চহারে কর আরোপ জরুরী।
২৫ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, সকাল: ১১.০০ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্চ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাষ্ট’র আয়োজনে “এসডিজি অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির গুরুত্ব” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) সভাপতি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) উপদেষ্টা মোজাফফর হোসেন পল্টু’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টর্স ফোরামের সহ সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিব, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাষ্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক। সেমিনার সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১,৬২,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে, জিডিপির ১.৪ শতাংশ টাকা খরচ হচ্ছে শুধুমাত্র তামাকে ব্যবহারে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য। তামাক নিয়ন্ত্রণ এসডিজির লক্ষ্য পূরণ সহায়ক । কিন্তু আমাদের তামাক কর কাঠামো খুবই দূর্বল। তামাকের উপর কর আরোপে কোম্পানীর হস্তক্ষেপ প্রতিহত করে সঠিকভাবে কর আরোপ করতে পারলে তামাক থেকে ১০০ বিলিয়ন টাকা আদায় সম্ভব।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, বিগত কয়েক বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম সে হারে বৃদ্ধি পায়নি বরং মুদ্রাস্ফিতী ও মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তামাকের প্রকৃত মূল্য কমেছে। সুতরাং তামাকজাত দ্রব্যের চাহিদা কমাতে অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি এর প্রকৃত মূল্য ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর নিদিষ্ট হারে কর বৃদ্ধি করে এটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
স্বাগত বক্তব্যে গাউস পিয়ারী বলেন, এসডিজি অর্জনে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তামাক শুধু স্বাস্থ্য নয়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এছাড়া কৃষি জমিতের তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি। সুতরাং তামাক সংশ্লিষ্ট সকল প্রক্রিয়ায় কর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, রাজস্ব বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অপুষ্টি, তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব।
মোহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, মিলেনিয়াম ডেবলপমেন্ট গোল অর্জন আমরা সফল হয়েছি। এবার এসডিজি অর্জনে আমাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। তামাক কোম্পানী থেকে আমাদের কত টাকা আয় হচ্ছে তা মূল বিষয় নয়। আমাদের দেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে যে মৃত্যু হচ্ছে তা রুখতে তামাকের উপর উচ্চ হারে আরোপ করতে হবে।
নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত যে তামাকের উপর কর বাড়লে তামাকের ব্যবহার কমবে। তবে আমাদের দেশের তামাকে কর বাড়ানোর ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানীর প্রভাব খুবই বেশি। তাদের প্রভাবের কারণে দেশের তামাকের উপর কর আদায়ের প্রক্রিয়াটি জটিল। এই জটিল প্রক্রিয়ার জন্য লক্ষ্য অনুসারে তামাকের উপর কর আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীব্যাপী একটি জটিল প্রক্রিয়া। তামাকের চাহিদা কমাতে বেশ কয়েকটি কৌশল আছে তার মধ্যে তামাকের কর বাড়ানো অন্যতম কৌশল। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাকের কর বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তামাক কোম্পানীগুলো বাজেটের আগে নানা ধরনের বিভ্রান্ত ছাড়ায়। এসব বিভ্রান্তকর তথ্যের বিষেয়ে সর্তক থাকতে হবে।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো যে ট্যাক্স বাড়ানোর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে তা নয়। তারা বাংলাদেশে শত শত কোটি টাকা ট্যাক্স ফাকি দিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক কার্যকর পদ্ধতি তামাকের মূল্য ও কর বৃদ্ধি। স্বল্পমূল্যে সাদাপাতা, জর্দা, গুল, বিড়ি ও সিগারেট সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য হওয়ায় বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের মধ্যে তামাক সেবনের হার ক্রমবর্ধমান। তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়ালে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত মৃত্যু কমে আসবে।
ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাক কোম্পানীর মূল লক্ষ্য তরুণদের ধূমপানে আসক্ত করা। তামাকের উপর উচ্চ হারে ট্যাক্স বাড়লে নতুন ধূমপানীয় সৃষ্টিতে বাধাগ্রস্থ হবে। ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষার স্বার্থে তাই তামাকের উপর অধিক হারে কর আরোপ করতে হবে।