News
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত ১২ জানুয়ারি ২০২০ ইং তারিখে “তামাক কোম্পানির আগ্রাসি প্রভাব জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অন্তরায়” শীর্ষক আলোচনা সভাটি সকাল ১১ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নাটাব এর প্রজেক্ট লিডার মুহম্মদ কামালউদ্দিন।
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ব্যহত করতে বাংলাদেশে কোম্পানীগুলো দীর্ঘদিন থেকে নানা কৌশলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আর্ন্তজাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)এর আর্টিক্যাল ৫.৩ তে তামাক কোম্পানীর প্রভাব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক নীতিসমুহ সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়তই তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিসহ আইন বাস্তবায়নে প্রবাব বিস্তার করছে। এসকল বিষয় নিয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক (প্রশাসন) গাউস পিয়ারী, ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিভগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, (বাংলাদেশ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি) এবং তারিকুল ইসলাম পলাশ, প্রধান নির্বাহী, এইড ফাউন্ডেশন। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান।
মুহম্মদ কামালউদ্দিন বলেন, বিগত দিনে বিশে^ তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উদ্যোগসমূহ প্রশংসা অর্জন করেছে। সরকারও আন্তরিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে গ্রহণ করছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণে সব থেকে বাঁধা তামাক কোম্পানির কূটকৌশল। তামাক নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিক অর্জন অব্যহত রাখতে তামাক কোম্পানির সকল ধরনের প্রভাব প্রতিহ করা একান্ত জরুরী।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে অনেক কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদেরও অনেক কাজ করে যেতে হবে, তাহলেই ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র পরিবেশ বিজ্ঞাপন বিভাগ বায়ূ দূষন নিয়ে একটি গবেষণা করছে। গবেষণার সার্বিক তথ্য কিংবা যেকোন সহযোগীতা গ্রহণের জন্য সভার সকলকে আহবান জানান।
তারিকুল ইসলাম পলাশ বলেন, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তামাক চাষে জমির ক্ষতি মাপার কোন ব্যারোমিটার না থাকায় জমির কৃষকরা এ বিষয়ে তেমন সচেতন নয়। তামাক কোম্পানিগুলো বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং চেগুয়েভারা’র মত সুনামধন্য ও খ্যাতীমান ব্যক্তিদের ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে করে একজন শিল্পী কিংবা কিংবদন্তীর সন্মানকে হানি করার সমতুল্য। সভ্য দেশে এটি সত্যিই বিশ্ময়কর। এখানেও সরকারকে তামাক কোম্পানির এধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে সোচ্ছার হয়ে কাজ করতে হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, এ যাবৎকালীন তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণের সকল নীতিতেই প্রভাব বিস্তার করেছে। তামাক কোম্পানির এসকল কার্যক্রম প্রতিহত করতে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোকেও বিপরীত পন্থা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদেরকে আরো কৌশলী হতে হবে।
হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক কোম্পানির কার্যক্রম সহজে পরিচালনার ক্ষেত্রে তামাক বিরোধী কিছু প্রতিনিধিকে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যবহার করছে। তামাক কোম্পানির অগ্রীম কর্মসূচি জানতে হলে আমাদেরকেও কিছু ফ্রন্টলাইনার তৈরি করতে হবে। যাদের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, তামাকের উপর কর বৃদ্ধি পেলে, সাধারণ মানুষ তামাক সেবন থেকে বঞ্চিত হবে। এতে করে নূন্যতম তামাক সেবনটিও সে করতে পারবে না, এধরনের মতবাক্য কিংবা মন্তব্য সরকার নীতি নির্ধারকদের কাছে আশা করা যায় না। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যথায় তামকমুক্ত বাংলাদেশ শুধু স্বপ্নেই রুপ নেবে। পাশাপাশি এটি বাস্তবায়নে সেক্রেটারি পদমর্যাদার একজনকে প্রধান করে অটোনোমাস বডি করতে হবে।
রিয়াজুল ইসলাম পিন্টু বলেন, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে তামাক থেকে সরে আসা প্রয়োজন। পাশাপাশি ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারীদের জাতীয় পুরষ্কার প্রদান থেকে বিরত থাকা। সর্বোপরি জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দৃষ্টান্তমূলক এতগুলো নজীর চোখের সামনে থাকার পরও তামাককে অর্থকরী ফসলের তালিকায় রেখে নতুন আইন প্রণয়ন সংবিধান, রাষ্ট্রীয় আইন ও মহামান্য হাইকোর্টের রায় অবমাননার সামিল। যা সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে।