প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকার
পৃথিবীর উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল কম বেশি সব দেশে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সিগারেটসহ তামাক পণ্য নিয়ন্ত্রণে কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে প্রতিবেশী ভারত-নেপালসহ অনেকগুলো দেশ সিগারেটের প্যাকেটের উপরের অংশের বেশিরভাগটা জুড়ে ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর ব্যবহার, ই-সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে কর আরোপ করলে সিগারেটের দাম যেমন বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়ে- তেমনি অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় সিগারেটের দামটা বেড়ে যাওয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।
হাইপোথিসিস নয়, কর বাড়িয়ে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে ধূমপায়ীর হার কমানোর বিষয়টি বাস্তবে করে দেখিয়েছে ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরও অনেক দেশ। বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ সিগারেটের বাজার বাংলাদেশ কি করছে? জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সিগারেটসহ তামাক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে কী কর বাড়ছে যথাযথভাবে? কর বৃদ্ধির কথা এলেইতো সিগারেট কোম্পানী নানা কৌশলে প্রচার চালিয়ে থাকে বাংলাদেশে একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশী রাজস্বের যোগানদাতা তামাকখাত! অন্য দেশের তুলনায় এখানে সিগারেটের ওপর করহারও অনেক বেশি, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করছে বিড়ি-সিগারেট-জর্দ্দা-গুল কোম্পানীগুলো, তামাক চাষের মাধ্যমে লাখ লাখ কৃষক পরিবার বেঁচে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে এবং প্রলোভন দেখিয়ে ভারতবর্ষের অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের পক্ষে টেনেছিল, ব্রিটিশ বেনিয়াদের সুরে তাল মিলিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে বেড়াতেন আড়াই’শ বছর আগে। তেমনি একুশ শতকে বাংলাদেশেও তেমনি বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানীগুলো প্রচার প্রচারণায় বিভ্রান্ত করছে দেশের নীতিনির্ধারকসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের। দেশীয় বিড়ি-সিগারেট-জর্দ্দা-গুল কোম্পানীগুলোও সমান তালে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর। তামাকজাত পণ্যের বাজার দ্রুত সম্প্রসারণ ও আকণ্ঠ মুনাফা অর্জনে অত্যন্ত সফলভাবে তৈরী করেছে বেশ কিছু মিথ! আর এই মিথগুলোর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কতিপয় সংসদসহ অর্থ-শিল্প-কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তাদের মাধ্যমেই কোম্পানী সৃষ্ট মিথগুলোই পৌচ্ছে যাচ্ছে নীতিনির্ধারকদের কাছে। সঠিক তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় যথাযথভাবে কর বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না সিগারেটসহ সকল তামাকজাত পণ্যে। বরং কোম্পানীর প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে করা হচ্ছে জটিল কর কাঠামো! এবারের ২০২০-২১ অর্থবছরের করোনাকালীন বাজেটেও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
আর কোম্পানী সৃষ্ট ও প্রচারিত মিথগুলোই বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যে কার্যকরভাবে কর বৃদ্ধি তথা জনস্বাস্থ্য রক্ষার আন্দোলনের বড় মনস্তাত্বিক বাধা। এজন্য মিথগুলো ভাঙ্গা অত্যন্ত জরুরী।
রাজস্ব মিথ: সিগারেটসহ তামাক পণ্যের ওপর যথাযথভাবে কর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ‘রাজস্ব মিথ’! একক খাত হিসেবে সিগারেট থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে বলে তামাক কোম্পানীগুলো নমো: নমো: ভাব দেখায়। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, সিগারেট থেকে রাজস্ব আসে তা কী কোম্পানী দেয়? নাকি জনগণ দেয়? সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসুন দেখি কীভাবে জনগণের দেয়া রাজস্বের নিজেদের নামে চালিয়ে বাহবা নিচ্ছে সিগারেট কোম্পানী।
এককভাবে দেশের সিগারেটের বাজারের ৬৪ ভাগ নিয়ন্ত্রণ বহুজাতিক কোম্পানী বিএটি’র হাতে। আর ২০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে আরেক বহুজাতিক কোম্পানী জাপান টোব্যাকো। বাকী ১৬ ভাগ দেশীয় অন্যান্য কোম্পানীর হাতে রয়েছে। যেহেতু সিংহভাগ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাই বিএটি’র রাজস্ব মিথ আলোচনা জরুরী। ২০১৯ সালে সিগারেট থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ২৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-বিএটিবি’র থেকে এসেছে ২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। আর ২২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেয়ার কথা বলে এনবিআরের কাছে বিএটি পছন্দমাফিক ‘লাভজনক কর কাঠামো’ আদায় করে নিচ্ছে। ২০১৯ সালের বিএটি’র আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার রাজস্বের মধ্যে মধ্যে সম্পুরক শুল্ক, ভ্যাট, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের (SD+VAT+HDSC) থেকে এসেছে ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আর কাস্টমস ডিউটি (CD) থেকে এসেছে ৩৪০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে SD+VAT+HDSC+CD থেকে রাজস্ব ২১ হাজার ৬৪৩ টাকা। এখানে ২২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার মধ্যে ২১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকাই বা প্রায় ৯৬ শতাংশই দিয়েছে ভোক্তারা অর্থাৎ- জনগণ! আর বিদেশে রয়্যালিটিসহ সব ধরনের খরচের পর কোম্পানীর আয় থেকে বিএটি আয়কর দিয়েছ মাত্র ৮১৬ কোটি টাকা! যা তাদের মোট আয়ের ৪ শতাংশের কম।
তাহলে সিগারেটের রাজস্বের প্রায় ৯৬ শতাংশ দেয় জনগণ আর কোম্পানী দেয় মাত্র ৪ শতাংশ! অথচ জনগণের দেয়া রাজস্ব কালেক্টর হিসেবে এনবিআরে জমা দিয়ে সবোর্চ্চ রাজস্ব দেয়ার ক্রেডিট এবং পুরস্কার পাওয়ার কথা কী বিএটি’র? এখানেই শেষ নয়, ২০১৯ সালে কর ও বছর বছর মেশিন কেনা, গ্রুপ কোম্পানীকে রয়্যালিটি বাবদ টাকা পাঠানোসহ সবধরনের খরচ শেষে কোম্পানীর লাভ ৯২৫ কোটি টাকা। আয়কর দিয়েছে ৮১৬ কোটি টাকা! তুলনা করলে দেখা যাবে কোম্পানীর লাভ বাড়ছে কিন্তু ইনকাম ট্যাক্স আর আয়কর তেমন বাড়ছে না। সবোর্চ্চ রাজস্ব দেয়ার ক্রেডিটে কী লুকিয়েছে শুভংকরের ফাঁকি?
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-বিএটিবি’র আয়কর ও মুনাফার চিত্র:
সাল | মুনাফা | আয়কর |
২০১৯ | ৯২৫ | ৮১৬ |
২০১৮ | ১০০১ | ৯৩০ |
২০১৭ | ৭৮৩ | ৮৯৩ |
[সূত্র: BATB এর ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন]
এ আয়কর ২০১৭ সালে ছিল ৮৯৩ কোটি টাকা। ২০১৮তে ছিল ৯৩০ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ছিল ৮১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ বছরে মুনাফা বেড়েছে ১৪২ কোটি টাকা, বিপরীতে তিনবছরে আয়কর কমেছে ৭৭ কোটি টাকা।
চোরাচালান মিথ: সিগারেটের ওপর কর বাড়ালে চোরাচালান বাড়বে। সিগারেট কোম্পানীগুলোর বহুপুরানো খোঁড়াযুক্তি প্রতিবছরই দিয়ে থাকেন বাজেটের আগ দিয়ে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সিগারেট কোম্পানীগুলোর কর বৃদ্ধির বিরুদ্ধে চোরাচালান তত্ত্বটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। নমুনা হিসেবে প্রতিবছরই বাজেটের আগ দিয়ে সিগারেট চোরাচালানের ঘটনা দেখা যায়। মজার ব্যাপার, ঠিক বাজেটের আগ দিয়ে দেখা যায় অবৈধ সিগারেটের চালান আটক করার ঘটনা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে দেখা যায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোটি টাকার শত শত সিগারেটের কার্টন উদ্ধার করে। এবং এই সংবাদ হুবুহু কমবেশি সবগুলো পত্রিকা-অনলাইন-টেলিভিশনে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। বছর জুড়ে বড় জোর দু’একটা চোরাচালানের খবর আসে। কিন্তু এপ্রিল, মে এবং জুন এই তিন মাসে বলা যায় বাংলাদেশে ৯৫ শতাংশ সিগারেট চোরাচালনের ঘটনা উদঘাটিত হয়। আর এই অবৈধ সিগারেটের চালান আটকের সংবাদগুলো খতিয়ে দেখলে তিনটি বিষয় খুবই পরিস্কার হয়- প্রথমত: সময় কাল ও সংবাদের বর্ণনা হুবুহু এক থাকে সবগুলো গণমাধ্যমে যা আগেই উল্লেখ করেছি। দ্বিতীয়ত: এসব সিগারেট চোলাচালানের সাথে জড়িতদের আটক হতে দেখা যায় না। বেশিরভাগ সময় বিমানবন্দরের ব্যাগ-পত্র সংগ্রহের বেল্ট থেকে বা ঐ চত্বরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত খবরের মাত্র ১/২ শতাংশক্ষেত্রে সিগারেটের আনার সাথে জড়িতদের আটক করার খবর চোখে পড়ে।
তৃতীয়ত: কোটি কোটি টাকার অবৈধ সিগারেটের চোরাচালানের যে কথা বলা কিন্তু, সেসব প্যাকেটে অত টাকার সিগারেট থাকে না। তাহলে কীভাবে এত টাকার সিগারেট আটক হয়? টাকার পরিমানটা দেখানো হয় আমদানী মূল্য যোগ করে। অথ্যাৎ এক প্যাকেট সিগারেটের দাম যদি একশ টাকা হয়, তাহলে তা আমদানীতে করতে দুই আড়াইশ শতাংশ শুল্ক আছে সেটা যোগ করে দেয়া হয়। এতে চোরাচালানকৃত সিগারেটের পরিমাণ কম হলেও টাকার অংক বেড়ে হয় কোটি কোটি টাকা। ফলে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট আটকের শিরোনাম দেখলে সবারই নজরে পড়ে। এই চোরাচালন তত্ত্বের সাথে সিগারেট কোম্পানীগুলো যে জড়িত থাকার অভিযোগও বিশ্বের দেশে দেশে। কারণ এতে তামাক ব্যবসায়ীদের লাভটা হয় দু’ভাবে। সিগারেট চোরাচালনের সংবাদ দেখিয়ে কর বৃদ্ধি না করার জন্য অটোমেটিক প্রেশার/ চাপ দেয়া যাবে। অন্যদিকে এই সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে তারা নীতি নির্ধারকসহ গণমানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে। চোরাচালান তত্ত্বের সংবাদ থেকে কিভাবে তামাক কোম্পানীগুলো সুবিধা নেয় সে সর্ম্পকিত একটি গবেষণা করেছিলাম ২০১৮ সালে।
“Analysis of Media Reports to Understand Tobacco Industry Tactics in Undermining Tobacco Tax Policies in Bangladesh” শিরোনামে গবেষণায় ২০১৫ সালের এপ্রিল ও মে এবং ২০১৬ সালের মে ও জুন এই চার মাসে ২০ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আধেয় বা কনটেন্ট বিশ্লেষণ করেছিলাম। আগেই বলেছি, জুন মাসে বাজেটে উপস্থাপনের কারণে এই সময়টায় বেশি তৎপর থাকে তামাক কোম্পানীগুলো এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের কর্মীরাও কর বৃদ্ধিতে দাবিনামা তুলে ধরে, তাই এই চার মাস বেছে নেয়া। উল্লেখিত সময়কালে ১৩৯৮টি তামাক সংক্রান্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ২৯৭টি সংবাদে তামাকের কর বা রাজস্ব সংক্রান্ত ছিল দু’এক লাইন। যার মধ্যে মাত্র ৫৮টি সংবাদ ছিল সত্যিকার অর্থে তামাকের কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিষয়ে (তামাক নিয়ন্ত্রণ দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে)। বিপরীতে, সিগারেট স্মাগলিং বা চোরাচালান বিষয়ক সংবাদ ছিল ২৯০টি। সাথে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ বিষয়ে সংবাদ ছিল ১১০টি। তার মানে হলো চোরাচালান ও কোম্পানীর হস্তক্ষেপের সংবাদ যোগফল দাঁড়ায় ২৯০+১১০= ৪০০টি, যা কোম্পানীর চিন্তাকে প্রতিধ্বনিত করে। বিপরীতে তামাক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সংবাদ মাত্র ৫৮টি! বিজ্ঞাপন দেয়ার সুযোগ না থাকলেও কীভাবে গণমাধ্যমে সংবাদ দিয়েই কোম্পানীগুলো নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করে তা বুঝতে এই গবেষণাই যথেষ্ট। বিস্তারিত উপরের টেবিলে;
নকল সিগারেট মিথ: কথায় বলে নতুন বোতলে পুরান মদ। অর্থাৎ মোড়ক বদলে গেলেও ভেতরের জিনিস সেই আগেরটাই রয়ে গেছে। রহস্যজনকভাবে গেল অর্থবছর থেকে সিগারেট চোরাচালনের খবর তেমন একটা চোখে পড়ছে না। আশ্চর্যজনকভাবে এ বছর বাজেটের আগে চোরাচালানকৃত সিগারেট আটকের খবর নেই বললেই চলে। তবে কী চোরাচালান বন্ধ হয়ে গেল কোনো যাদুর কাঠিতে? উত্তর হলো না। ঐ যে নতুন বদলে পুরাতন মদ….মানে ‘চোরাচালান তত্ত্ব’ আউট, নকল সিগারেট ইন। মানে দেশেই এখন নকল সিগারেট কারখানা তৈরী হচ্ছে এই খবর হুট করেই কয়েক মাস ধরে দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে। বনে বাঁদাড়ে, নদীর ধারে, পরিত্যক্ত কারখানায় একের পর এক আবিস্কার হতে লাগলো নকল সিগারেট কারখানা! কিন্তু কি ব্র্যান্ডের নতুন সিগারেট তৈরী করছে, কারা করছে সে সর্ম্পকে পরবর্তীতে আর কিছুই জানা যায় না।
সবোর্চ্চ করভার মিথ: বাংলাদেশে সিগারেটের ওপর কর যা কর রয়েছে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এমন প্রচার-প্রচারণা প্রতিনিয়ত চালিয়ে আসছে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানীগুলো। তাদের আর্থিক বিবরণীতেও তা এমনভাবে উল্লেখ করা হয় যাতে সরকারি নীতি প্রণেতাদেরকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। যেমন তিন বছর আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে জর্দ্দা-গুলসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যে কর বৃদ্ধির প্রশ্ন করেছিলাম। উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্মোকলেস ট্যাবাকো প্রোডাক্টে তো ট্যাক্স অনেক বেশি আছে। প্রতিউত্তরে তাকে জানিয়েছিলাম, ২ টাকার পণ্যে ১০০ভাগ কর বসালে হয় ৪ টাকা, ৫ টাকা হলে হবে ১০ টাকা দাম যেটি যে কেউ কিন্তু কিনতে পারবে। কিনছেও মানুষ বিক্রিও হচ্ছে বছরে ১৬’শ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সরকার সঠিকভাবে কর আরোপ না করায় এত বিক্রিত পণ্যে কর পাচ্ছে নাম মাত্র! বিস্মিত হয়ে অর্থমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, “১ হাজার ৬’শ কোটি টাকার জর্দ্দা-গুল বিক্রি হয়? অথচ, ওখান থেকে ট্যাক্স কিছু পাই না। এবার আমি ট্যাক্স ওয়ান হান্ডেড, টু হান্ডেড পারসেন্ট বাড়িয়ে দেব।” ধোঁয়াহীন তামাক পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনার উদাহরণটি আনার কারণ হলো- নীতি নির্ধারকদের কাছে সঠিক বার্তা পৌছাতে দেয় না আমলাতন্ত্রের সংশ্লিষ্টরা।
এবার আসি সিগারেটের ওপর সবোর্চ্চ কর আরোপের বিষয়ে। নিম্নস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন চার্জ মিলিয়ে মোট করভার ৭১ শতাংশ। আর মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়ামে এই তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশসহ মোট করভার ৮১ শতাংশ। মজার ব্যাপার ৭১-৮১ শতাংশ করভার হলেও পৃথিবীতে সবচেয়ে সস্তা সিগারেট মেলে বাংলাদেশে। একমাত্র প্রতিবেশি দেশ মায়ানমারের দু’একটি ব্রান্ডের সিগারেট ছাড়া আমাদের দেশে কম দামে মেলে সিগারেট। এজন্যই আমরা দেখি, ইউরোপ-অ্যামেরিকায়সহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে যান ভ্রমণকারীরা। যদি সিগারেটের ওপর করভার সবোর্চ্চ হতো তাহলে দামও বেশি হওয়ার কথা? আর বাংলাদেশে দাম বেশি হলে ব্যাগে করে বিদেশে সিগারেট টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা কী? এতটা বোকা কেউ নয় যে, কম দাম ফেলে বেশি দামে সিগারেট টানবে বিদেশ যাত্রীরা? ফলে সিগারেটের ওপর করভার সবোর্চ্চ বলে কোম্পানী যে মিথ প্রচার করে তা কেবল ভোক্তাসহ নীতি নির্ধারকদের বিভ্রান্ত জিইয়ে রাখতে।
প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ নতুন বা রিকন্ডিশন গাড়ির ওপর সর্বনিম্ন করভার ১৩০ শতাংশ। সবোর্চ্চ ৮৪০ শতাংশ। বিড়ি-সিগারেটের চেয়ে আধুনিক জীবন যাপনে ব্যক্তিগত, দাপ্তরিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগে যানবাহন নিশ্চয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে মৃত্যু বিপণনকারী সিগারেটের ওপর ৮১ শতাংশ আদৌ বেশি? গাড়ীর ওপর কর বাড়ানো হয়েছে কারণ ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ন্ত্রণের জন্য। তাহলে হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ মারাত্নক রোগ সৃষ্টিকারী সিগারেট-বিড়িসহ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বেশি কর আরোপ কী জরুরী নয়?
কর্মসংস্থানের মিথ: বিড়ি কোম্পানীগুলোর প্রচার করতো বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ লাখ কখনও বলতো ২২ লাখ কখনও আবার ২৫ লাখ। আর এই লাখ লাখ শ্রমিকের মিথ দিয়ে সংসদ সদস্যদের বিভ্রান্ত করে বিড়ি মালিকরা। বিড়ির ওপর কর বাড়ালো লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে আর তাতে বিশাল ভোট ব্যাংক হারাবে সরকার এই খোঁড়া যুক্তিতে বছরের পর বছর কর না বাড়ানোর জন্য রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ডিও লেটার দিতেন সংসদ সদস্যরা। ২০১৩ সাল থেকে ডিও লেটার দেয়ার হার খানিকটা কমলেও এখনও কিছু কিছু সংসদ সদস্য তথাকথিত লাখ লাখ বিড়ি শ্রমিক সংখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে চিঠি দিয়ে থাকেন। আসলে কী বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ১৫/২০ লাখ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ২০১২ সালে আমিন আল রশীদ ও আমি যৌথভাবে গবেষণা করেছিলাম।“Bididi in Bangladesh: Myths and Reality” শিরোনামে দেশের ৬৪ জেলায় পরিচালিত আমাদের গবেষণায় মোট বিড়ি কারখানা পেয়েছিলাম ১১৭টি। আর নিবন্ধিত বিড়ি শ্রমিক মাত্র ৬৫ হাজার। নাম মাত্র মজুরী হওয়ায় হাতে বিড়ি বানানোর কাজে পরিবারের সদস্যরা অংশ নেয়। সেই সহযোগী শ্রমিক ধরে বাংলাদেশে মোট নিবন্ধিত ও সহযোগী বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু রয়েছে। যারা মারাতœক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বিড়ি কারখানায় বাবা-মায়ের সাথে বিড়ি বানানোর কাজ করে।
দেশব্যাপী বিড়ি শ্রমিক নিয়ে প্রথম গবেষণা কর্মের মোড়ক উম্মোচন করেছিলেন তখনকার খাদ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান কৃষি মন্ত্রী কৃষিবিদ ড.আব্দুর রাজ্জাক। ৬৫ হাজার বিড়ি শ্রমিক তথ্য সম্বলিত গবেষণা কর্মটা অর্থমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংসদ সদস্যদের হাতে পৌছানো হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অর্থমন্ত্রীর সাথে সচিবালয়ে বিড়ি মালিকরা প্রাক-বাজেট আলোচনায় সেই ১৫/২০ লাখ বিড়ি শ্রমিকের মিথ তুলে ধরলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, “দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় আপনাদের ১৫ লাখ শ্রমিক? গবেষণায় পাওয়া গেছে মাত্র ৬০/৭০ হাজার শ্রমিক। আপনারা খামোখা এসব বলে বেড়ান…..” সেদিন সচিবালয়ে সংবাদ কাভার করার সুবাদে দেখেছি অর্থমন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বিড়ি মালিক সমিতি’র সভাপতি বিজয় বাবু।
গবেষণা করতে গিয়ে প্রথম যখন রংপুরে গেলাম সেখানে মাত্র কয়েক হাজার শ্রমিকদের মালিক ও শ্রমিকদের নেতা জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় আপনাদের লাখ লাখ শ্রমিক? রংপুরে সবচেয়ে বেশি বিড়ি কারখানা ও শ্রমিক। উত্তরে তারা বলেছিলেন এখানের চেয়ে বেশি সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বরিশালসহ অন্য জায়গায়। ভাল কথা, সিরাজগঞ্জে এসে দেখি ৪/৫টি কারখানায় হাজার দুয়েক শ্রমিক। তাদের কেউ প্রশ্ন করলে বলেন, বেশি শ্রমিক আছে রংপুরে, লালমনিরহাট, কুষ্টিয়ায়, বরিশালে….। কুষ্টিয়া অঞ্চলে এসে সেই একই অবস্থা দু’আড়াই হাজার বিড়ি শ্রমিক। সেখানকার মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিজ্ঞাসা লাখ লাখ বিড়ি শ্রমিক কোথায়? উত্তরে তারা নিজের জেলায় কম, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালে বেশি বলে জানায়। শেষে বরিশালে মূলত কারিকর বিড়ির কারখানা দু’টি। সেখানেও নিবন্ধিত শ্রমিক সংখ্যা খুবই কম। দেখে সেখানেও প্রশ্ন করলে তারাও দেখালেন লাখ লাখ শ্রমিক আছে রংপুর অঞ্চলে, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে! বোঝা গেল, আসলে শ্রমিক সংখ্যা সম্পর্কে কারও কাছে তথ্য নেই, তাইতো সবাই পিলো পাসিং বা বালিশ খেলার মতো এ ওকে, ও অন্যের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে। এভাবেই আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে ১৫/২০ লাখ ভোট ব্যাংক তথা বিড়ি শ্রমিকের মিথ।
আমাদের গবেষণা সেই বিড়ি শ্রমিকের মিথ ভাংতে পেরেছিল। এবং পরবর্তীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গবেষণাতেও বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা আমাদের কাছাকাছিই পেয়েছিল। বিড়ি শ্রমিকের মতোই সিগারেট কর্মসংস্থানের মিথও কম যায় না। কিন্তু, সিগারেট খাতেও কর্মসংস্থান খুবই কম। আগেই বলেছি, দেশের সিগারেটের বাজারের ৬৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে বিএটি। তাদের ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা মাত্র ১৪২৬ জন। জাপান টোব্যাকো’তে সাড়ে চারশসহ সবমিলিয়ে দুই হাজারের মতো কর্মসংস্থান আছে সিগারেট খাতে। বলা বাহুল্য, বিএটি’র ১৪২৬ জনের মধ্যে ৮৩ ভাগই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী! ফলে কর্মসংস্থানের দিক দিয়েও তারা লাখ লাখ মানুষের কথাও কি মিথ নয়?
এমনকি কোম্পানীগুলো বলে সারাদেশে লাখ লাখ তামাক চাষী রয়েছে। অথচ বিএটির নথি বলছে, তাদের তালিকাভুক্ত তামাক চাষীর সংখ্যা ৩৮ হাজার। যেহেতু তারা মোট সিগারেটের ৬৪ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে তাই সে হিসেবে তামাক চাষীর পরিমান কোনো মতেই ৫৫ হাজারের বেশি নয়। ফলে কোথায় লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তামাক চাষী?
তামাক চাষের মিথ: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকী এবং খাদ্য ঘটতিসহ তামাক চাষে জমির উর্বরা শক্তি ধংসের পরও কৃষি মন্ত্রণালয় তামাক একটি ‘অর্থকরী ফসল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তামাক গাছের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটায় বিষ। তা জানার পরও পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হচ্ছে ‘তামাক অর্থকরী ফসল’। আদৌ কী তামাক অর্থকরী ফসল, উত্তর বলতে হয়, হ্যাঁ অর্থকরী ফসল বটে! কিন্তু, সেটা তামাক কোম্পানীর জন্য। কৃষকের জন্য কোনদিনই তামাক অর্থকরী ফসল ছিল না আগামীতে থাকবে না। অনেকটা, ডাক্তারের হাতের ছুরি আর ছিনতাইকারীর হাতের ছুরির মতো। খটকা লাগছে? ডাক্তার ছুরি দিয়ে মানুষের পেটে কাটে এবং রক্ত বের হয়। তবে সেটা রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য ছুরি চালান ডাক্তারা।
অন্যদিকে ছিনতাইকারী মানুষের পেটে ছুরি চালায় তাতেও রক্তপাত হয় এবং এতে মানুষটির প্রাণ সংহারের শঙ্কা থাকে। ছিনতাইকারীর হাতে মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। এখানে একই ছুরি একজনের প্রাণ রক্ষা করছে, আবার ঐ ছুরিই আরেকজনের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে ছুরি কার হাতে এটা অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ঠিকই একইভাবে তামাক অর্থকরী তবে কার জন্য তা বোঝাও জরুরী। যেমন: বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে দেশের রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গে তামাক চাষ হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে, দেশের সবচেয়ে দরিদ্রপীড়িত অঞ্চল রংপুর তথা উত্তরবঙ্গ। মঙ্গা শব্দের সাথে সবাই পরিচিত। আর এই মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলে দরিদ্র শুধু নয়, হতদরিদ্র মানুষের বাস যেখানে বেশি সেখানেই তামাকের চাষ বেশি এবং বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। তাহলে তামাক যদি অর্থকরী ফসলই হয় তাহলে কুড়িগ্রাম-রংপুর-লালমনিরহাট-নীলফামারির মানুষ এত দরিদ্র কেন? কেন মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল উত্তরবঙ্গের তামাক চাষীরা? উত্তর একটাই, কৃষি মন্ত্রণালয় যতই তামাক কোম্পানীর সুরে ও ভাষায় বলুক না কেন, তামাক চাষ কখনও কৃষকের জন্য অর্থকরী নয়। এটা অর্থকরী একমাত্র তামাক কোম্পানীগুলোর জন্য। তাইতো তামাক চাষীরা আমৃত্যু দরিদ্র থেকে যাচ্ছে বিপরীতে ফুলে ফেঁপে মুনাফা অর্জন করছে তামাক কোম্পানীগুলো। তামাক চাষীদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও তাদের ফলানো তামাকের টাকা ডলার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশীদের পকেটে। তাই সময় হয়েছে তামাক চাষের মিথের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার।
তবে তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বাধা বহুজাতিক কোম্পানীতে সরকারের শেয়ার থাকা। বিএটির মোট শেয়ারের মধ্যে সরকারের শেয়ার ৭ শতাংশের কম। কিন্তু বিএটি’র পরিচালনা পর্ষদের ১০সদস্যের মধ্যে ৫জনই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অতিরিক্ত সচিব অধিষ্ঠিত। শিল্প সচিব, কৃষি সচিব পদাধিকার বলে বিএটি’র বোর্ড মেম্বার হয়ে যায় কীভাবে তা বোঝার উপায় নেই। শিল্প সচিব পাল্টে গেলেই বিএটির বোর্ড মেম্বারও পাল্টে যায়। যেমন ক’দিন আগে শিল্প সচিব আব্দুল হালিম বোর্ড মেম্বার ছিলেন বিএটিতে। তার চাকুরী থেকে অবসারে যাওয়ায় ২৭ মে,২০২০ নতুন শিল্প সচিব হয়েছে কেএম আলী আজম। আগামী বছরের বিএটির আর্থিক বিবরণীতে সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিমের জায়গায় বসবে বর্তমান সচিব আলী আজমের নাম। ২০১৪ সাল থেকে তখনকার শিল্প সচিব মোশাররফেেহাসেন ভূইয়া এনবিআররের চেয়ারম্যান হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএটি’র বোর্ড মেম্বার ছিলেন। ফলে সামান্য কয়েক শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে কেন এতগুলো সচিব বেসরকারি কোম্পানীর বোর্ডে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।
রাজস্বের জন্য সরকার যখন তাগাদা দিচ্ছে তখন গেল অর্থবছরের বাজেটে তামাক কোম্পানীকে সুবিধা দিতে রফতানি শুল্ক তুলে দিয়েছিলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া। তামাক পাতা রফতানি করলে সরকারকে আগে ২৫ শতাংশ কর দিতে হতো। সেটা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং গেল অর্থবছরে তা পুরোপুরি তুলে দিয়ে শুন্য শুল্ক করেছে। সরকার বছরে অর্ধশত কোটি টাকা পাওয়া রাজস্ব ছেড়ে দিল কোম্পানীকে। এই ছাড়ের টাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালায় বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের বাজেটের সমান! একইভাবে ইনপুট ক্রেডিট সুবিধা তুলে দিয়ে বছরে প্রায় ৪’শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে সরকার। যা অর্থবিলের প্রস্তাবে উল্লেখ ছিল না, অনেকটা গোপনে কোম্পানীকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে তামাকের উপর যথাযথভাবে রাজস্ব বাড়ালে সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর প্রস্তাব করছে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মীরা। এতে রাজস্ব বাড়বে, কমবে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়-ক্ষতি। বিপরীতে তামাক কোম্পানীগুলো সুবিধা নিয়ে নিজেদের পকেটে ভারি করছে।
[লেখক: সুশান্ত সিনহা, তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন]