দেশের ৩০ টি জেলার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের হার ৫০ শতাংশেরও কম। তামাক কোম্পানির বেপরোয়া আইন লঙ্ঘন এবং পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে আইনের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশের তরুণদের মাঝে তামাকের ব্যবহার বেড়ে যাবে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যকে ব্যহত করবে এবং স্বাস্থ্য ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ‘র সহায়তায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট দেশের ৩০টি জেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস থেকে পর্বেক্ষণমূলক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম MPOWER এর আলোকে “জেলাভিত্তিক রিপোর্ট কার্ড” তৈরী করেছে। উক্ত রিপোর্ট কার্ডে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধি-বিধান বাস্তবায়নের বর্তমান পরিস্থিতির যে চিত্র উঠে এসেছে তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।

৩০ জুন ২০২৪ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন: জেলাভিত্তিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা আরো বলেন, আইন লংঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত এবং তামাক ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দিতে হবে। যা অন্যদের সচেতন করতে সহায়তা করবে।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারীসাইফুদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর সাবেক সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবি সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা । অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সারা দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের অবস্থা মূল্যায়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধান প্রয়োগে উদ্যোগ গ্রহণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট জেলাভিত্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ রিপোর্ট কার্ড তৈরি করেছে। রিপোর্ট কার্ডে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে দেশের ৩০টি জেলার মধ্যে ৩টি জেলা (১০%) সন্তোষজনক, ১২টি জেলা (৪০%) মাঝামাঝি অবস্থান, ৯টি জেলা (৩০%) অসন্তোষজনক, এবং ৬টি জেলা (২০%) ঝুকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে এমন জেলাসমুহ হচ্ছে নাটোর, ঝিনাইদহ এবং বরিশাল। মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওঁগা, মাগুরা, মেহেরপুর, দিনাজপুর, রংপুর, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ। অসন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাও, সিলেট, পিরোজপুর, নেত্রকোনা, রাজশাহী। ঝুঁকিপূর্ন জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে জামালপুর, ব্রাক্ষনবাড়িয়া, কক্সবাজার, চাদপুর, চুয়াডাঙ্গা এবং গাইবান্ধা। সার্বিক চিত্র বিশ্লেষনে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে ঝিনাইদহ জেলা (৫০%) এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে গাইবান্ধা জেলা (১৭%) ।

তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট বিবি-বিধান বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে সভায় বেসরকারি সংস্থাগুলোকে যুক্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, রিপোর্ট কার্ডে উল্লেখিত তুলনামূলক সফল জেলাগুলোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দূর্বল জেলাগুলোর অবস্থা উন্নয়নে প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে নীতি সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা, সরকারি উদ্যোগে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষণমূলক গবেষনা আরো বিস্তৃত আকারে পরিচালনা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সভা নিয়মিতকরনের সুপারিশ করা হয়।