News
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থ বাজেটকে সামনে রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট করনীতি প্রণয়ণ এবং কর বৃদ্ধিতে কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করা জরুরী। গত ০২ মে, ২০২৩, মঙ্গলবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশান, বিএনটিটিপি, ডাস, দিশারী মহিলা কল্যাণ সমিতি, আইডিএফ, কেএইচআরডিএস, নারী মৈত্রী, নাটাব, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সংস্থা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, সীমান্তিক, টিসিআরসি, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ, ইপসা ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে “তামাক কর বৃদ্ধিতে কোম্পানীর বাধা, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য”শীর্ষক একটি অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপির প্রকল্প কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ২০৪০ সালের পূর্বেই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এরই অংশ হিসাবে তিনি একটি শক্তিশালী তামাক করনীতি প্রণয়নের ঘোষণাও দিয়েছেন। কিন্তু কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের পাশাপাশি রাজস্ব মিথ, সামাজিক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রচারণার ফলে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কার্যকরভাবে কর বৃদ্ধি হচ্ছেনা। ফলে ভোক্তাদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য প্রতিনিয়ত আরো সস্তা হচ্ছে তথা জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়ছে।
সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট আন্তরিক হওয়া সত্তেও কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের ফলেই তামাক নিয়ন্ত্রনে আশানুরূপ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কার্যকরভাবে কর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার তথ্যগুলো পৌঁছানো অনেকক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের মাত্র ০.৬৪% শেয়ার এবং বিএটি’র পরিচালনা পর্ষদে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবস্থান তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা হিসাবে চিহ্নিত।
বক্তারা আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্দ্ধগতির ফলে অতিরিক্তি ব্যয় সামাল দিতে সাধারণ মানুষ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু তামাকজাত দ্রব্য। দেশে মোট ধূমপায়ীর প্রায় ৭২ শতাংশ নিম্নস্তরের সিগারেটের দখলে থাকা সত্ত্বেও গত ৩ বছরে ১০ শলাকা বিশিষ্ট নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটের মূল্য মাত্র ১ টাকা বৃদ্ধি এরই প্রমাণ বহন করে। যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের দৌড়ে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বাড়িয়ে এই অতিরিক্ত রাজস্ব প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারে ভর্তুকির জন্য ব্যয় করলে স্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি ২৭ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। গ্লোবাল নিউট্রিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপুষ্টি প্রতিরোধের জন্য প্রতি ১ মার্কিন ডলার খরচের বিনিময়ে ১৬ মার্কিন ডলার উঠে আসে, যা পুষ্টিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। পরিশেষে বক্তারা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে তামাকের উপর অতি-নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে বের করার দাবি জানান। এছাড়া তামাক কোম্পানির সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়েও আলোকপাত করেন বক্তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনটিটিপি, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি, শিশুর জন্য মুক্ত বায়ূ সংস্থা, মানস, বাঁচতে শিখ নারী, নারী মৈত্রী, ইপসা, দিশারী মহিলা কল্যাণ সমিতি, নাটাব, টিসিআরসি, আইডিএফ, কেএইচআরডিএস, নবনীতা মহিলা কল্যাণ সমিতি, দিশারী, এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টসহ অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন।