জনস্বার্থে প্রণীত নীতি সুরক্ষা ও তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাক কোম্পানির প্রভাব প্রতিহত করা জরুরি
আইন ও নীতিমালাকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি-র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। গত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে “তামাক নিয়ন্ত্রণে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে করনীয়” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও দ্যা ইউনিয়ন এর আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার জনাব রুহুল আমিন। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালযের অতিরিক্ত কমিশনার সৈয়দা সারোয়ার জাহান এর সভাপতিত্বে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্র্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা শারমীন আক্তার রিনি। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের বিভাগীয় উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোঃ মিজানুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আমিনুল হক চৌধূরী, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, চট্টগ্রামের এডিসি জেনারেল মাসুকুর রহমান, চট্টগ্রামের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আক্তার হোসেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি, ইপসার টিম লিডার নাছিমা বানু শ্যামলী, আবসার নির্বাহী পরিচালক, আবুল কাশেম, হেলপ এর নিবার্হী পরিচালক আবুল কাশেম, ব্রিজ এর নির্বাহী পরিচালক দেলোয়ার হোসেন।
 
প্রবন্ধ উপস্থাপক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক গৃহিত আন্তর্জাতিক চুক্তি (Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) । এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী। তামাক কোম্পানিগুলো নানা ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে আইন ও নীতি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। আইন ও নীতিকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে এফসিটিসি-র আর্টিকেল ৫.৩  অনুসারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে। এফসিটিসি ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির সাথে সকল ধরনের আলোচনা উম্মুক্ত হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬৪ লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য আইনসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার জনাব রুহুল আমিন বলেন, “সামাজিক নেতিবাচক প্রভাব প্রতিহত করে আমরা সকলেই ভাল থাকতে চাই। তামাক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রসর করতে বৈজ্ঞানিক গবেষনার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সকল ধরনের সহযোগিতা থাকবে তবে গণমাধ্যমকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগে এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নে বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা প্রদাণ করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি”।
 
বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী সব ধরনের তামাকের ব্যবহার সীমিত ও নীতি প্রনয়ণের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা এফসিটিসি এর অন্যতম মূল লক্ষ্য। এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমুহকে এর নির্দেশনা অনুসারে তামাক কোম্পানি ও তাদের সাথে সম্পৃক্তদের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা আর্টিকেল ৫.৩ তে উল্লেখ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধে এই চুক্তি অত্যন্ত কার্যকর।
 
বক্তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানির অপকৌশল ও অপচেষ্টাকে প্রতিহত ও নিয়ন্ত্রণ করতে জনসচেতনতা ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতারণামূলক কার্যক্রমের ফলে আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
 
বক্তারা বলেন, এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নের পথে তামাক কোম্পানিগুলো বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে তামাক কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পৃষ্ঠপোষকতার আড়ালে যেসব কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে এতে করে ক্ষতিকর তামাকজাত পণ্যের বাজার প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের কিছু দেশ এফসিটিসি ৫.৩ স্বাক্ষর করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যয় আমাদের দেশেও এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এফসিটিসি এর গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটির বাস্তবায়নে জোরালোভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সরকারিভাবে এটি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।