News
থানা একটি সরকারি অফিস। এখানে নারী-শিশুসহ অধূমপায়ীরা বিভিন্ন রকম সেবা গ্রহণ করার জন্য থানায় আসেন। এজন্য পাবলিক প্লেস হিসাবে দেশের সব থানা ভবনগুলো ধূমপানমুক্ত করা হবে। ৩১ মে ২০১০ থেকে রমনা থানা ভবন ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হলো। এ থানা ভবনে কেউ যেন ধূমপান না করে সেটা থানার পুলিশ কর্মকর্তারা লক্ষ রাখবেন। আগামীতে দেশের সব থানা ধূমপানমুক্ত করা হবে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে রমনা থানা ভবন ধূমপানমুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত ঘোষণা দেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাহারা খাতুন এমপি বলেন, আমাদের দেশে নারী ধূমপায়ী কম হলেও গ্রামের দরিদ্র ও নিরক্ষর নারীদের তামাক সেবনের হার অনেক বেশি। তাই তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ, বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী, জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন) ১০০ভাগ ধূমপানমুক্ত করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, তামাক একটি ভয়াবহ নেশা। ধূমপানের নেশা থেকে পর্যায়ক্রমে তরুণ প্রজন্ম অন্যান্য মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন করা দরকার। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনকে একযোগে কাজ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাদক সেবন করে এরা প্রায় সবাই ধূমপান করে। অর্থাৎ ধূমপানকে বলা হয় মাদক সেবনের প্রবেশ পথ। যারা অপরাধ করে, তারাও ধূমপান করে। তাই অপরাধ কমানোর জন্যও ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
আসাদুজ্জামান এমপি বলেন, তামাক চাষ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। যে জমিতে ধান উৎপাদন হত সে জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য হুমকি। সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে ধূমপানের পক্ষে একটি যুক্তি দেখাতে পারবে। যে পণ্য বাংলাদেশের ৫৭ হাজার মানুষকে মেরে ফেলছে, যে পণ্য বাংলাদেশের ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষকে পঙ্গু করে ফেলছে, সে পণ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করতে হবে।
আসমা জেরিন ঝুমু এমপি বলেন, তামাক নারীদের মারাত্মক ক্ষতি করে। তামাকের কারণে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য’র ক্ষতি হচ্ছে। সুস্থ্য মানুষ ছাড়া সুস্থ্য জাতি গড়া সম্ভব নয়। সুস্থ্য মানুষের জন্য তামাক ও ধুমপানমুক্ত মানুষ দরকার। তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে সচেতন করতে গণমাধ্যমে প্রচারণা বাড়াতে হবে।
আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, থানা ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে আজকে যে কর্মসূচীর উদ্বোধন হল, বাংলাদেশ পুলিশ আগামীতে এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। পর্যায়ক্রমে থানাসহ পুুলিশের সব ভবনগুলোকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, তামাক চাষ, তামাক প্রক্রিয়াজাত করণ, তামাক সেবন সব ক্ষেত্রেই দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসছে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার। আইন আরও কঠোর করা দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার একেএম শহিদুল হক বলেন, আজ থেকে রমনা থানা ভবনে কোন পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা কোন বহিরাগত ব্যক্তি যেন ধূমপান না করেন সেটা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার কমাতে বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ও দাম বাড়াতে হবে।
রমনা মডেল থানা’র সহকারী পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা বিভাগ) কৃষ্ণ পদ রায় এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বাংলাদেশ পুলিশ এর উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর বিভিন্ন সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।