News
বাংলাদেশের প্রথমসারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তামাক কোম্পানিকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার নীতি গ্রহণ করেছে। বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত ১২ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সার্বিক জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এফসিটিসি-৫.৩ আর্টিকেলকে সমর্থন জানিয়ে “কোড অব কনডাক্ট” স্বাক্ষর করে। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত আয়োজনে একটি কর্মসূচীতে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উপাচার্য প্রফেসর ড.সাইফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব বিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাষ্টির চেয়ারম্যান এবং টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। টিসিআরসির প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নে কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপ চিহ্নিত করে তা উত্তরণে কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্র্য প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র সাহা, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিস এর সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইসার সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিলি সুলতানা এবং অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন বিশ^বিদ্যালয়ের অতিঃ রেজিস্ট্রার ড. শাহ আলম চৌধুরী। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শতাধিক শিক্ষার্থী, টিসিআরসির কর্মকর্তাগণসহ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড.সাইফুল ইসলাম তামাক কোম্পানির মুখোশ উন্মোচনের উদ্দেশ্য নিয়ে আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানকে কোড অব কন্ডাক্ট গ্রহণের আহবান জানান। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি যথাসম্ভব সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, পৃথিবীর সবথেকে বেশি মানুষকে হত্যার মূল কারিগর তামাক কোম্পানি। সকল প্রকার নেশার মূল কারণ তামাক এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে এইসকল নেশাও অতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তামাক কোম্পানি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বাঁধা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি তরুনদেরকে চাকরির লোভ দেখিয়ে পরোক্ষভাবে নিজেদের পণ্যের প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনের প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র সাহা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকারী, বেসরকারী ও আর্ন্তজাতিক পরিসরে কাজ করে আসছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণা ও নীতি নির্ধারণেও তারা অবদান রাখছে। সামনের দিনগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি এ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টির জন্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রচার প্রচারণায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তিনি খাদ্য উৎপাদনে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে তামাক চাষের পরিবর্তে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব¡ প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯% তরুণ। তামাক কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরী করার লক্ষ্যে তারা মূলত তরুণদের টার্গেট করে। এছাড়া, ই-সিগারেটকে কম ক্ষতিকর হিসেবে প্রচারের পাশপাশি তরুণদেরকে আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে স্মোকিং জোন তৈরি করে দিচ্ছে।
পরিশেষে বক্তারা বলেন, তামাকের বিরূদ্ধে ইউনিভার্সিটির আজকের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নো-স্মোকিং সাইনেজ স্থাপন এবং ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়কেন্দ্র গুলো অপসারনের দাবি জানান।
৫.৩ অনুসারে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবে:
তামাক কোম্পানির সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে প্রচারণা বন্ধ।
সর্বস্তরের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের এফসিটিসি-র আর্টিকেল ৫.৩ সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান, সচেতনতা বৃদ্ধি।
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানি বা কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা গ্রহণ, প্রদান ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবে।
সকল বিভাগ ও কার্যালয় সম্পূর্ণ তামাকমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকবে।
অন্যান্য সংস্থাসমূহকে এফসিটিসি-র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে উদ্ধুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবে।
তামাক কোম্পানির স্বার্থে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছেন, এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।