News
বিএটির প্রতারণামূলক কর্মসূচি ব্যাটল অব মাইন্ড বন্ধের দাবি
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে প্রত্যক্ষ প্রচারণা নিষিদ্ধ হওযায় ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাকের নেশায় আকৃষ্ট করতে নানাধরনের প্রতারণামূলক কর্মসূচী পরিচালনা করছে। নৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তির আলোকে তামাক কোম্পানির এ ধরণের প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যেন তামাক কোম্পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সচেতন ও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
৩১ জানুয়ারী, সকাল ১১টায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ আয়োজনে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। “জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সামাজিক দায়ববদ্ধতা কর্মসূচীর আড়ালে তামাক কোম্পানি কর্তৃক তরুনদের আকৃষ্টকরণ কর্মসূচী প্রতিহত করতে করণীয়” শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপত্বিতে সভায় বক্তব্য রাখেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাশেদ নূর, হেলথব্রীজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ত্রৈমাসিক পত্রিকা সমস্বর’র নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
প্রবন্ধে সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির মত ধূর্ত ও প্রাণঘাতি পণ্যের ব্যবসায়ী চাকুরি দেয়ার নামে ব্যাটল অব মাইন্ড শিরোনামে একটি প্রতিযোগিতা দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করছে। চাকুরি প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের মধ্যে প্রাণঘাতী পণ্যের প্রচারণা ও তাদের তামাকের নেশায় ধাবিত করা এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। গত ১০ বছরে ১৮ হাজার তরুণের মধ্যে পরিচালিত কর্মসূচি থেকে মাত্র ১০০ জন এন্ট্রি লেভেলের চাকুরি দেয়া হয়েছে।
ড. রাশেদ নূর বলেন, ধূমপান হচ্ছে মাদক সেবনের প্রবেশ পথ। সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য তরুণদের ধূমপানসহ সব নেশা থেকে দূরে থাকা দরকার। দেবরা ইফরইমসন বলেন, ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ, সরকারকে কর ফাঁকি দেয়াসহ নানা অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। তামাক কোম্পানির এসব অপকর্ম সম্পর্কে মানুষকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে। তরুণরা আগামী দিনে নেতৃত্ব দিবে। তাই তরুণদের নেশা থেকে দূরে থাকা ও ইতিবাচক কাজে সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
তামাক সেবনের ভয়াবহতা তুলে ধরে অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, উন্নত দেশগুলোতে তামাকের উৎপাদন ও ব্যবহারের হার কমায় বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঝুঁকছে। তামাকের কারণে দেশের অর্থনীতি তথা খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য, বনজসম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মাটির স্বাস্থ্য ইত্যাদি সবকিছুতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেহেতু তরুণরাই তামাকের প্রধান ভিকটিম, তাই তরুণদের এ ব্যাপারে সচেতন করে তামাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধূমপানমুক্ত প্রতিষ্ঠান। তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন ও তাদেরকে পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে রক্ষা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
গাউস পিয়ারী বলেন, বাংলাদেশের ৩০% এর অধিক জনগোষ্ঠী তরুণ। তামাক কোম্পানিগুলো দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণদের ধূমপানের নেশায় ধাবিত করার উদ্দেশ্যেই মূলত এসব লোভনীয় কর্মসূচী পরিচালনা করে থাকে। এই তরুণ সমাজকে ভবিষ্যতে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই সচেতন হতে হবে। তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কর্মসূচী প্রতিহত করতে হবে ।
সভায় স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।