News
জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় এবং করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি পোষাতে ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ করা জরুরী। তাই তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামোতে সুনির্দ্রিষ্ট কর প্রবর্তন এখন সময়ের দাবী। ১০মে, ২০২০ সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত ‘তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এই দাবী জানান।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) সম্মিলিতভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। মিটিং সফটওয়ার জুম এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে কয়েকজন সংসদ সদস্য, নীতিনির্ধারক, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, তামাক নিয়ন্ত্রণ এডভোকেট ও উন্নয়ন কর্মীরা অংশ নেন।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, তামাক জাত দ্রব্যের ওপর সুনিদিষ্ট কর আরোপ হলে প্রায় ২০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ত্যাগে উৎসাহিত হবে। সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ চলতি অর্থবছরে চেয়ে ৪ হাজার ১০০ কোটি থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আয় হবে। যার হার বিড়ি ও সিগারেট থেকে প্রাপ্ত বর্তমান রাজস্বের চেয়ে অন্তত ১৪% বেশি। পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ কর ববস্থার কারণে প্রতিবছর তামাক কোম্পানীর ক্রম বর্ধমান মুনাফা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাঁরা বলেন, এনবিআর প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থে তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের কথা বলা হয়েছে। ফলে সিগারেটেও সুনির্দিষ্ট করারোপে কোনো অসঙ্গতি বা জটিলতা নেই।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম তামাক ব্যবসাবান্ধব দেশ। এ পরিস্থিতি বজায় থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ফলে আসন্ন বাজেটেই সব ধরনের তামাক পণ্যে বহু স্তরভিত্তিক কর পদ্ধতি বাদ দিয়ে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এতে সরকার যেমন বাড়তি রাজস্ব পাবে তেমনি তরুণদেরও তামাক পণ্য থেকে দূরে রাখা যাবে। পাশাপাশি একটি গহণযোগ্য কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি যুগোপযোগী তামাক-কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানী প্রতিবছর বিপুল টাকা কর প্রদান করছে বলে যা দেখানো হয় তা আসলে ভ্যাট ও সম্পুরক কর বাবদ আদায়করা টাকা। এই টাকা পরিশোধ করে জনগণ, তামাক কোম্পানী নয়। তামাক কোম্পানী আয়কর বাবদ যা পরিশোধ করে তা কর বাবদ মোট আদায়কৃত করের ৩ শতাংশ মাত্র। তারা বলেন, বিগত অর্থ বছরে তামাক কোম্পানীর তাছ থেকে কর বাবদ আদায় করা হয় মোট ২২,৬৩০ কোটি টাকা যার মধ্যে আয়কর মাত্র মাত্র ৮১৬ কোটি টাকা যা তামাক কোম্পানী পরিশোধ করেছে। বাকি ২১,৩০৩ কোটি টাকা জনগণ পরিশাধ করেছে।
ওয়েবিনারে বক্তারা ধোঁয়াবিহীন তামাকের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, জর্দা, গুল, সাদাপাতা উৎপাদনকারী অধিকাংশ কোম্পানির তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে নেই। ফলে তারা কর আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজম্ব হারাচ্ছে।
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এছাড়া মূল্যবান বক্তব্য রাখেন নীলফামারী-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, বগুড়া-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, নারী আসন-৪৫ এর মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম. রশীদ চৌধুরী এবং নারী আসন-৪৬ এর মাননীয় সংসদ সদস্য নাজমা আকতার ।
সংসদ সদস্যগণ একটি সময়োপযোগী তামাক-কর ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দ্রিষ্ট কর আরোপের পক্ষে নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার থাকার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
ওয়েবিনারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এবং এটি সঞ্চালনা করেন দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব গভার্নেন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যগ্ম-সচিব জনাব খায়রুল আলম সেখ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দীন আহমেদ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা । তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দ এ ওয়েবিনারে অংশ নেন।