স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং হতে পারে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যকর হাতিয়ার-ওয়েবিনারে বক্তারা
তামাকজাত পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং হতে পারে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার। যা তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাস করার পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার “স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং: প্রতিবন্ধকতা ও বাস্তবায়নে করণীয়” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়েবিনার আয়োজন করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিআরসি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও গবেষণা সহকারী ফারহানা জামান লিজা। তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এতে অংশ নেন।
 
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সচিবালয়ের পক্ষে সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং মডেলটি বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানি বাঁধার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্যাকেট ওর্য়ানিং এর ক্ষেত্রে যেমন কোম্পানিগুলো নিজেদের সুবিধার দিকটাই গুরুত্ব দিয়েছে, সেই সুযোগটি তাদেরকে আর দেওয়া যাবে না।
 
স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং-এর প্রয়োজনীয়তা এবং এর কাঠামো তুলে ধরে মূল প্রবন্ধে ফারহানা জামান লিজা বলেন, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাস্তবায়ন হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে যেতে পারবো। সহজতর হবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মনিটরিং এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতসহ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাসে সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করবে এই মডেল। 
 
অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এর তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের যে কোন বিষয় বাস্তবায়ন দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সব কিছুর পরও আমরা সব সময়ই সফলতা পেয়েছি এবং এই ক্ষেত্রেও আমরা সফল হবো এটাই আমার বিশ্বাস। জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক সেগুলোকে নিয়ে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। 
 
এইড ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিক বলেন, খোলা তামাক বিক্রয় ও খুচরা শলাকা বিক্রয় তামাক নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম অন্তরায়। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং এই সমস্যা সমাধানের একটি পথ হতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই খোলা তামাক ও খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করেছে তাদের সরকার। আমাদের দেশেরও উচিৎ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এসব খোলা তামাক ও খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করা।
 
গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির এ্যাডভোকেসি ম্যানেজার খন্দকার রিয়াজ হোসেন বলেন, টিসিআরসি যে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং মডেলটি তুলে ধরেছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এটি বাস্তবায়নে আমরা সরকারকে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে হবে। আমরা সবাই একসাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনে কাজ করছি, এ আন্দোলনটিও আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করবো।
 
আর্ন্তজাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস- এর কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ) মো. নাসির উদ্দিন শেখ বলেন, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এই আন্দোল কে আরো জোরদার করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সোস্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে এবং পাশাপাশি প্রেস মিডিয়াকেও এগিয়ে আসতে হবে।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর সঠিক বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। সেই সাথে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাস্তবায়ন হলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই-এর বাজার মনিটরিং-এর ক্ষেত্রে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ে একটি রোল মডেল হবে।
 
সভাপতির বক্তব্যে প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ বলেন, একটা সময় কেউ ভাবতে পারেনি যে, তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রচলনেও অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিলো। কিন্তু আশাহত না হয়ে আমরা আন্দোলন চালিয়েছি যার ফল পেয়েছি। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রেও আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখবে। 
 
সমাপনী বক্তব্যে টিসিআরসির সদস্য সচিব ও প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বিভিন্ন দূর্বলতা খুঁজতে এই স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং এর প্রয়োজনীয়তা। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের মতামতের ভিত্তিতে টিসিআরসি এই মডেলটি প্রস্তাব করে। ইতোমধ্যেই এই মডেল জনহপকিন্স ইউনিভার্সিটির নজর এসেছে। তারাও এই মডেলটি নিয়ে কাজ করছে। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং মডেলটি ইতোমধ্যেই জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে করোনা মহামারীর কারণে এটি বাস্তবায়নে কিছুটা দেরি হলেও আশা করা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই এটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হবে।
 
টিসিআরসি’র প্রজেক্ট অফিসার মো. মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য দেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রজেক্ট অফিসার আবু রায়হান, নাটাবের প্রতিনিধি কানিজ ফাতেমা রুশি প্রমূখ।