News
১৯৭০ সাল থেকে শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়েছে, যা ২০% বার্ষিক গ্রিনহাউস বৃদ্ধি করে। বছরে ২২ বিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি পানি তামাক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা বিশ্বে পানির সংকট তৈরী করছে। এছাড়াও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের মাধ্যমে বছরে ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ফলে দূষিত হচ্ছে সমুদ্র এবং ধ্বংস করছে সামুদ্রিক সম্পদ।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস -২০২২ উপলক্ষে গত ৩১ মে মঙ্গলবার, বিকাল ৪ টায় পুরানো ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে (ভিক্টোরিয়া পার্ক) পরিবেশ বিনষ্টকারী তামাক কোম্পানির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি তামাকের বিরূদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, বিএনটিটিপি ও টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেলের (টিসিআরসি) সম্মিলিত উদ্যোগে তামাক বিরোধী গণসমাবেশ ও গণস্বাক্ষর ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে গণস্বাক্ষর ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি শিশু কিশোরদের অংশগ্রহনে ধূমপান বিরোধী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বাউল গান, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, টি-শার্ট বিতরণ, বেলুন ডিসপ্লে এবং সাউন্ড সিস্টেমের আয়োজন করা হয় ।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস -২০২২ উদযাপন উপলক্ষে ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে ঘিরে উক্ত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র শহিদ উল্লাহ মিনু, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধি সামিউল হাসান সজীব, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা আজিম খান, স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মকর্তাবৃন্দ, তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ অগণিত দর্শনার্থী।
টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেলের (টিসিআরসি) কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায়, গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক চাষের ক্ষেত্রে কৃষি জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার করার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস, পানি ধারণ ক্ষমতা নষ্ট এবং ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এসকল ক্ষতিকর রাসায়নিক নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পানি দূষিত করছে যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরূপ। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য নির্বিচারে বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ সব রকম গাছ কেটে চুল্লিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা আমাদের জীববৈচিত্র, পরিবেশ ও জলবায়ুর মারাত্বক ক্ষতি করছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, সিগারেটের ফিল্টার /বাট ৫-৭ বছরের মধ্যে পচে না যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (GATS) ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপায়ী। একজনের প্রতিদিন ধূমপান করা সিগারেটের গড় সংখ্যা ৯.১। এইভাবে, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১২৩ মিলিয়ন সিগারেটের বাট তৈরী হয়। ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) অনুসারে তামাকের প্রচার-প্রচারনা, বিজ্ঞাপন, পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন সিএসআর কর্মসূচী পরিচালনা করছে। বক্তারা তামাক কোম্পানির এই স্পর্ধার পেছনে কোম্পানিতে সরকারের বিদ্যমান শেয়ারকে দায়ী করেন। সমস্যা সমাধানের লক্ষে তারা অতিসত্বর এই শেয়ার প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। এছাড়াও, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের ছোট কৌটা বা প্যাকেটের ব্যবহার পরিবেশগত উদ্বেগের কারন হয়ে উঠেছে। সুতরাং পরিবেশ বাঁচাতে এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে উচ্চহারে কর আরোপ করে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।