প্রবন্ধ ও সাক্ষাৎকার
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকজনিত রোগ হতে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, শতভাগ ধূমপানমুক্ত পাবলিক প্লেস ও পরিবহন, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী নিশ্চিত, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ, তামাক ত্যাগে সহযোগিতা প্রদান এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করার জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের বাংলাদেশ অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আংশিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূল্যায়ন বা পর্যবেক্ষনের কারণে দেশের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিত সম্পর্কে কেউ কেউ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। দেশের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মূল্যায়ণ করলে তামাক নিয়ন্ত্রণে দেশের ব্যাপক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। একটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তামাক নিয়ন্ত্রণ একদিনে বা কয়েক বছরের তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করার সম্ভব নয়।
একদিকে সরকার ও তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীরা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তামাক ব্যবহার হ্রাস করতে, অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারের জন্য তামাক সেবনে উদ্বুদ্ধ কেেরছ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যক্রর পদক্ষেপগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। নানা বিভ্রান্তকর প্রচারণার মাধ্যমে জনগনকে বিভ্রান্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তকর প্রচারণার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণে তড়িৎ ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যখন তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন তামাক কোম্পানিগুলো কর্মসংস্থান হ্রাস পারে, রাজস্ব ক্ষতি হবে এ ধরনের বিভ্রান্ত তথ্য তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে। যদিও একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার তামাকের কারণে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাষী, উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক এবং ব্যবহারকারী। জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি জরুরি বিষয়।
দেশের তরুন ও যুব সমাজকে রক্ষায় আইন সংশোধন ও কর বৃদ্ধির জরুরি
যুব সমাজের মাঝে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে প্রতিটি সচেতন মানুষই উদ্বিগ্ন। তামাক ব্যবহার পরবর্তীতে অনেক যুবই আসক্ত হচ্ছে মাদক জাতীয় নেশায়। এ নেশায় আসক্ত হয়ে ধ্বংশের পথে যাচ্ছে দেশের যুব সমাজের একটি অংশ। যা রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতিসহ সার্বিক অবস্থার জন্য শংকার বিষয়। দেশের আগামী প্রজন্মের কান্ডারী এই যুব সমাজকে যে কোন মূল্যেই আমাদের রক্ষা করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন আজ তাই একটি জরুরি বিষয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়, যেসব ধূমপায়ী শৈশব-কৈশোরেই ধূমপান শুরু করে তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রথম সিগারেট পান করে। তামাক কোম্পানিগুলো শিশু-কিশোর-তরুণদের ধূমপানে আসক্ত করে তুলতে চায়। তামাক কোম্পানির যেসব গোপন দলিল প্রকাশিত হয়ে পড়ে সেসব দলিলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তামাক কোম্পানি বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি-বিএটির ৭৪ সালের এক তথ্যে দেখা যায়, ‘কিশোর/তরুণ ধূমপায়ীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংখ্যার দিক থেকে তারাই প্রধানত বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা একবার যে ব্র্যান্ড পছন্দ করে তা সারাজীবন চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
যুব সমাজকে তামাক ব্যবহার হতে বিরত রাখতে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী, ধূমপানমুক্ত স্থান এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ হারে কর বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনটি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আইনটির প্রেক্ষিতে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী জোরদার হয়েছে। তথপিও আইনটির কতিপয় দূর্বলতা রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে আইনের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে । তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা দেশের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে চাষীদের তামাক চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও অপুষ্টি ঘাটতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায়। তামাক চাষ অনেক শ্রমের প্রয়োজন ও কঠিন কাজ। তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মারত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর কার্যক্রম দরকার।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন :
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে আইনটি সুফল জনগনের নিকট তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। আশার কথা হচ্ছে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামতের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি খসড়া প্রস্তাবনা পেশ করেছে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা প্রেক্ষিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা; সকল তামাকজাত দ্রব্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা; প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তামাক কোম্পানির নামে লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর আদায়, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরির করতে ব্যর্থ হলে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো আইনেরযুক্ত করা প্রয়োজন।
তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসে কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর অব্যাহত কর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালীকরন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর অব্যাহত কর বৃদ্ধির দাবি তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীদের দীর্ঘদিনের। বিগত বছরগুলোতে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি তামাকজাত দ্রব্যের দাম। দেশের জনসাধারন সকল পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করলেও, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির বিষয়ে সমর্থন করে। গবেষণায় দেখা যায় ৮১% মানুষ তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিকে সমর্থন করেন।
তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দরিদ্র জনগন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে, রাজস্ব কমে যাবে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ধরনের দাবি উপস্থাপন করে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে দেশী ও বিদেশী তামাক কোম্পানিগুলো। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিগুলো এ ধরনের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে আসছে। যার প্রেক্ষিতে সকল দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি হচ্ছে না।
দেশে ডাল, তেল, চাল, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দামের বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে অনেকেই কথা বলেন না। অথচ বিড়ি-সিগারেটের দাম বৃদ্ধির কথা বললেই কেহ কেহ দরিদ্র জনগনের ক্ষতি হবে, লোকজন বেকার হবে, আয় কমে যাবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে বিরোধীতা করে থাকে। তাদের এই হট্টগোল দরিদ্রদের জন্য, না অন্যকোন কারণে তা বোধগম্য নয়। দরিদ্রতার জন্য ডাল, তেল, চাল, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার প্রয়োজন হয় না ? এ সকল নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে তো কোন কথা উত্থাপিত হয় না। দেশী প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব হ্রাস পাবার বিষয় তুলে যারা বিড়ি সিগারেটের উপর কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে, তাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, তারা কি তামাকজনিত কারনে মানুষের মৃত্যু কামনা করেন। মানুষের রোগ ও মৃত্যু হয় এমন পন্যকে আমরা বানিজ্যের জন্য উৎসাহিত করতে পারি না।
তামাকজাত শিল্প হতে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় তামাক চাষী, শ্রমিক এবং সেবনকারীরা। কোম্পানির মালিকদের লাভের জন্য দরিদ্রতা, রোগ, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহানি এবং মৃত্যু এ সকল কিছুই জোটে জনগনের ভাগ্যে। আমরা মানুষের মৃত্যুঘাতী পন্যের ব্যবহার বৃদ্ধি দেখার পরও চুপ থাকতে পারি না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি’র গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় এবং নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
তামাক ব্যবহার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। গবেষণায় দেখা যায় তামাকের পিছনে ব্যয়কৃত অর্থের ৬৯% খাদ্যের পিছনে ব্যায় করা হলে ৫০% শিশুকে অপুষ্টি থেকে বাচাঁনো সম্ভব। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি তামাক ব্যবহার হ্রাস করে এবং তামাক কোম্পানির নতুন ধূমপায়ী (বিশেষ করে যুবক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে) তৈরিতে বাধাগ্রস্ত করে।
তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্েেরিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। অপর গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে প্রায় ২৯১২ কোটি টাকা খরচ হয়, যা দিয়ে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ গবেষণা অনুযায়ী বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ ল গরু অথবা ১৪ ল টন চাল অথবা ২৩ ল রিকশা কিনা সম্ভব। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। তামাককের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকার তিনভাবে লাভবান হবে, প্রথমত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, দ্বিতীয়ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন হবে, তৃতীয় তামাক হতে রাজস্বের আদায়কৃত রাজস্ব তামাক শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যয় করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) সমূহে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাস এবং কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। নীতিনির্ধারনের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করার অর্থ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন।
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেকখানি। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত দেশের এই অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে অব্যাহত প্রয়াশ চালাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বিষয়ে নৈতিবাচক প্রচারণা তাদের এ সকল কার্যক্রমের অন্যতম হাতিয়ার। কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার স্বার্থে নানাভাবেই দেশের তামাক বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। তামাক কোম্পানির তাদের মুনাফার উদ্দেশ্যে মানুষকে রোগ ও মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিচ্ছে, অপর দিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের উদ্দেশ্য মানুষের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করা। মানুষের স্বাস্থ্য অপেক্ষা অর্থ কখনোই মুখ্য হতে পারে না। সরকার, প্রশাসন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পদক্ষেপ কোম্পানির অশুভ উদ্দেশ্য প্রতিহত করে জনগনের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করবে এ আমাদের বিশ্বাস।