সংসদ এলাকায় পরিবেশ ধ্বংশকারী তামাক কোম্পানি

“বিদেশী তামাক কোম্পানির টাকায় গাছ লাগানো হবে সংসদ এলাকায়” শীর্ষক একটি সংবাদ গতকাল ও আজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় তামাক কোম্পানির বৃক্ষরোপন কর্মসূচী আয়োজনের প্রেক্ষিতে আমরা উদ্বিগ্ন। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার শুধু মানুষের স্বাস্থ্যের নয়, পরিবেশ জন্যও ক্ষতিকর। তামাক উৎপাদন ও শুকানোর প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত উজার হচ্ছে বন। বাংলাদেশে পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষের জন্য বন উজার হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংশ হচ্ছে ফসলী জমি ও পরিবেশ। তামাক কোম্পানিগুলো পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যকলাপ বন্ধে জনস্বার্থে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে বা বর্তমানে বিচারধীন।

তামাক কোম্পানিগুলো দেশে প্রতিবছর ১২ লক্ষ মানুষের ক্যান্সার, হৃদরোগ, যক্ষা, ডায়বেটিস, হাঁপানি, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি রোগের জন্য দায়ী। এছাড়া ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষের পঙ্গুত্ব এবং ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্যও দায়ী এ তামাক কোম্পানিগুলো। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের প্রতিবছর ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয। যা তামাক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বেরও দ্বিগুণ।

তাদের পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যকলাপকে আড়াল করতে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর আয়োজন করে থাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর নামে এ কর্মসূচীর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো সহানুভুতি আদায়ের জন্য পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারও করে থাকে। এ সকল কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে আড়ালে পড়ে যায় বন নিধনের কর্মকান্ড। কোম্পানিগুলো বৃক্ষরোপনের এ ইমেজ ব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন নীতি ও কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্কালে মহান জাতীয় সংসদের তামাক কোম্পানির এ ধরনের কার্যক্রম আইনের সংশোধন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা বলে প্রতীয়মান।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর ও র‌্যাটিফাই (অনুস্বাক্ষর) করেছে। এফসিটিসি অনুসারে তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণ করা যায় না। সংসদ সচিবালয় তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় গাছের চারা গ্রহণ করলে সেটা হবে এ আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন এবং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এতে করে ক্ষুন্ন হবে।

জাতীয় সংসদ ভবন চত্তরে পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগানো একটি মহৎ চিন্তুা। কিন্তু এ গাছ লাগানো কোনভাবেই পরিবেশ ধ্বংশকারী এবং রোগ ও মৃত্যু সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থে হওয়া সমীচীন নয়। জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর বা জলবায়ু ফান্ড কর্তৃপক্ষের নিকট এ জন্য অর্থে চাইতে পারেন। আমরা আশা করি, সংসদ এলাকায় তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় গাছ লাগানো কর্মসূচী হতে থেকে বিরত রাখতে মাননীয় স্পীকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র ও দেশের অন্যান্য তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর একটি প্রতিনিধিদল এ বিষয়টি অবহিত করে আগামী ২৭ আগষ্ট ২০১২ সকাল ১১ টায় মাননীয় স্পিকারকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করবে।