News

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরাম, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত আয়োজনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনিদিষ্ট কর আরোপের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

 

ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরামের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, যমুনা টিভির সিনিয়র রির্পোটার ও তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। সভা সঞ্চালনা করেন ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

 

রুমানা হক তার প্রবন্ধে বলেন, ২০০৯ সালে ১৫ বছরের উর্ধে ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে ২০১৭ সালে ৩৫ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের প্রসার ও তাদের গ্রাহক বাড়তে তরুণের তামাক ব্যবহারের উদ্ধদ্বু করছে। আমাদের সুনির্দিষ্ট কর আরোপের পাশাপাশি এর উপর প্রচলিত স্তর প্রথা বাতিল করতে হবে। তামাকের উপর সঠিকভাবে উচ্চ হারের কর বৃদ্ধি করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং এর বিপরীতে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমবে। 

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে রুমানা হক আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, তামাক খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় হয়।

 

শারমিন রিনভী বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষায় আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদেরকেও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই রাজস্ব আয়, সিগারেটের চোরাচালান, কর্মসংস্থানসহ নানা ধরনের বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করা হয়। অথচ তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে অধিক অর্থ ব্যয় হয় তামাকজনিত কারনে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায়। পাশ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সিগারেটের দাম কম। ফলে প্রমানিত হয় যে, সিগারেটের চোরাচালান মূলত কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা। এ ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে কোম্পানীগুলো তামাকের উপর কর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।

 

তিনি আরো বলেন, তামাকের বৃহৎ বাজার থাকলেও স্বল্প পরিমাণ মানুষ তামাকের বিপনন, উৎপাদন ও চাষের সাথে জড়িত। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে তামাকের উপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে কমিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার রোধে গণমাধ্যমগুলোকে আরো সর্তক হওয়ার অনুরোধ করেন।

 

সুশান্ত সিনহা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসী প্রচারণা চালাছে। দেশে বছরে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে সিগারেটের উৎপাদন। এতে করে লাভবান হচ্ছে কোম্পানীগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম তামাকের বাজার বলেই সম্প্রতি দেশে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে একটি বিদেশি তামাকজাত কোম্পানি। প্রকৃতপক্ষে তামাক ব্যবহার, উৎপাদন, চাষ সকলক্ষেত্রে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তামাক চাষ এলাকাগুলো দেশে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র পীড়িত। বাংলাদেশে বিক্রিত মোট সিগারেটের ৯৪ ভাগ খোলা বিক্রি হয়। তরুণদের তামাক থেকে দূরে রাখতে কর বৃদ্ধি, আইনের সংশোধনসহ খোলা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা প্রয়োজন।

 

গাউস পিয়ারি বলেন, রাজস্ব আদায় থেকে আমাদের জনস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণে এর উপর কর বৃদ্ধি অন্যতম কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্যহানিকর তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করে তা জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।  

 

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খোলা কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাফর আহমেদ, জিটিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজু আহমেদ, দৈনিক সময়ের আলোর প্রতিবেদক আলমগীর হোসেন, একাত্তর টিভির সিনিয়র জাহেদুল ইসলাম মজুমদার, এস এ টিভির বাণিজ্য সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবলু প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।