তামাক নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও স্থায়ী তহবিল যোগানের আহ্বান
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দিনব্যাপি “Conference on Sustainable Tobacco Control in Bangladesh” সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ জানুয়ারী ২০২০ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিষ্টিটিউটে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, দি ইউনিয়ন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট উক্ত সম্মেলন আয়োজন করে। সারাদেশ থেকে শতাধিক সরকারী, বেসরকারী ও আর্ন্তজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, কৃষিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ সরাসরি ও ভার্চুয়ালী সম্মেলনে সংযুক্ত হন।
 
তামাক নিয়ন্ত্রণে আর্থিক যোগান নিশ্চিত, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন, তামাকের উপর কর বৃদ্ধি, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ ও তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সকল নীতি সুরক্ষার উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ।
 
সম্মেলনে আগত বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভূক্ত ১০০ এর অধিক সংগঠন স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একটি আচরণবিধি স্বাক্ষর করেন। এই আচরণবিধি বা কোড অব কন্ডাক্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল অনুসারে প্রস্তুত করা হয়।
 
সম্মেলনে সরাসরি ও ভার্চুয়ালী বক্তব্য রাখেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সভাপতি মোজ্জাফ্ফর হোসেন পল্টু, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা সভাপতি ও সাবেক উপাচার্য্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এর পরিচালক (অর্থ) আমিন-উল-আহসান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সমন্বয়কারী (যুগ্ম সচিব) মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি’র প্রকল্প পরিচালক (তামাক নিয়ন্ত্রণ) ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. রুমানা হক প্রমুখ।
 
আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের মধ্যে কোভিড অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ১৪ গুণ বেশী। ক্রমবর্ধমান রোগের জন্য জনসাধারণকে মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলা অত্যন্ত জরুরী। রাজস্ব আয়ের দোহাই দিয়ে তামাকের প্রসারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
 
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এম.পি বলেন, বাংলাদেশে তামাক পণ্যের কর কাঠামো অত্যন্ত দূর্বল। এ কর কাঠামো দিয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকের কর কার্যকরভাবে বাড়ানোর বিকল্প নেই। ই-সিগারেট বন্ধে পাশর্^বর্তী দেশগুলো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। ই-সিগারেটে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হতে পারি যদি সময়ের পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়। তামাক কোম্পানি কর্তৃক নীতি নিধারনী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের কারণে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এদিকটায় নজর দেয়াও অত্যন্ত জরুরী।
 
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। তামাক থেকে প্রাপ্ত সারচার্জ তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
 
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
 
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষা, প্যাকেটে স্বাস্থ্য সর্তকবানীর আকার বৃদ্ধিসহ বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করে দ্রুত যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।
 
ফরিদা আখতার বলেন, বিশ্বে তামাক চাষে জমি ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ ১৪ তম এবং উৎপাদনে ১২তম। শুধু স্বাস্থ্য নয় দেশের কৃষি, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্রের জন্য হুমকি এ তামাক। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
 
ড. রুমানা হক বলেন, শুধুমাত্র প্রকল্প নির্ভর তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দিয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারী বেসরকারীভাবে বাৎসরিক মাত্র ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্থায়ী অর্থের জোগান ও তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তামাক খাত থেকে অর্জিত করের একটি অংশ তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুহার ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র চিকিৎসা নির্ভরতায় কাঙ্খিত ফল আসবে না। দীর্ঘমেয়াদে এক্ষেত্রে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
 
দিনব্যাপি সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ১২০টি সংগঠনের ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। চারটি অধিবেশনে সর্বমোট ৬টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।