News
তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত করতে ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর হতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সাথে জড়িত আছে ৭০০ টিরও বেশী বেসরকারী সংগঠন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)’র স্থানীয় সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) বাস্তবায়নেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট’র স্থানীয় সংগঠনগুলো। ইতিপূর্বেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্যরা । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নে আমাদের হাতে আছে আর
মাত্র ১৮ বছর। তামাক নিয়ন্ত্রণে বড় প্রতিপক্ষ তামাক কোম্পানি। কাজেই শক্তিশালী তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে এ আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে সরকারের পাশাপশি বেসরকারী সংগঠনগুলোকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। এনটিসির গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নেও তামাক বিরোধী জোটের আরও বেশী দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ০৬ মার্চ ২০২২, রবিবার সকাল ০৯টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যেগে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সেমিনার (কৈবর্ত) হলে Workshop on Strengthening Tobacco Control Capacity of Local Level Organizations শীর্ষক কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী ও সমাপনী আয়োজনসহ তিনটি সেশনে কর্মশালাটি সাজানো হয়। সারা দেশ থেকে তামাক বিরোধী জোটের প্রায় ৪০ টিরও বেশী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ কর্মশালায় অংশ নেন। প্রথম সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং উক্ত সেশনটির সঞ্চালনায় ছিলেন ডাব্লিউবিবির প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান।
উদ্বোধনী সেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা: প্রাণ গোপাল দত্ত, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খন্দকার, ভাইটাল স্ট্যাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রাম শফিকুল ইসলাম, দ্যা ইউনিয়নের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হামিদুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। এই সেশনটি সঞ্চালনায় ছিলেন ডাব্লিউবিবির বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান। এ পর্যায়ে তৃণমূল সংগঠনগুলোর পক্ষ হতে স্থানীয় পর্যায়ে বিলবোর্ড স্টিকার, লিফলেট, পোষ্টার বিতরণ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক বরাদ্দের দাবী জানানো হয় এবং মনিটরিং রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় । দ্বিতীয় সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সৈয়দা অনন্যা রহমান । এই সেশনে তামাক কোম্পানির আইন লংঘনের তথ্য, চ্যালেঞ্জ এবং তামাক কোম্পানির বিপক্ষে পদক্ষেপ ও ফলাফলগুলো উপস্থাপন করা হয়। সিয়াম, ডিডিপি, মৌমাছি, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, টিসিআরসি, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, এইড ফাউন্ডেশন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তাগণ সেশনটিতে উপস্থিত ছিলেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সমমনা স্থানীয় সংগঠনের অব্যাহত কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে ধূমপান নিয়ন্ত্রনে বেশ কিছু অর্জন রয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সফলতা এখনও অর্জিত হয় নাই। ২০১৩ সালে সংশোধিত আইনটি আবার সংশোধনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্রিটিশ টোবাকো কোম্পানির পাশাপাশি জাপান টোবাকো কোম্পানিকেও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসা হচ্ছে যার বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। স্বাস্থ্যমন্থণালয়ের একার পক্ষে এই কাজ একা করা কঠিন। সারা দেশ থেকে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক চাষ লাভজনক এই মিথ থেকে সরে আসতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্লেস ও পরিবহণে জরিমানা বৃদ্ধি, ধূমপান মুক্ত স্থান চিহ্নিত করতে হবে। তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদনকারী ব্যাবসায় নিয়োজিত ব্যক্তি সরাসরি অন্যকোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে না। ১০০ মিটারের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। তরুণ সমাজকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি দাবী জানান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে টাস্কফোর্সে অন্তর্ভুক্ত সকল স্থানীয় সংগঠনের জন্য আর্থিক বরাদ্দের নিশ্চয়তা দেয়া হোক।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনে জড়িত স্থানীয় সংগঠনের কাছে অভিভাবক স্বরুপ। তিনি আশা ব্যক্ত করেন স্থানীয় সংগঠনগুলোকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। স্থানীয় সংগঠন গুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনে আরও জোড়ালো করার দাবী জানান।
ডা: প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রান গোপাল বলেন, তামাকে ক্যান্সারের ক্ষতিকর ১৯ টি উপাদান আছে যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে স্বীকৃত। তামাক নিয়ন্ত্রণে আমদের নিজের ঘর থেকে আগে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে পরিবার, গ্রাম এমনকি পুরে দেশ তামাক মুক্ত হবে। গণমাধ্যমে তামাকের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের আহবান জানান।
হোসেন আলী খন্দকার বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল প্রধান দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা ইতিমধ্যেই হাতে নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী বছর থেকে স্থানীয় সংগঠন গুলো সরাসরি আর্থিক বরাদ্দের নিশ্চয়তা পাবে। কিন্তু তার আগে স্থানীয় সংগঠন গুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরী। কিন্তু তামাক কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারা তাদের ব্যাবসায়িক লাভ ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে। কাজেই জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে স্থানীয় সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানান। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটিকে আরও শক্তিশালী করা এবং তিনমাসের পরিবর্তে দুই মাস পরপর টাস্ক ফোর্স মিটিং করার কথা বলেন। কর্মশালার শেষ সেশনে একটি কনসালটিং গ্রুপ মিটিং এর আয়োজন করা হয় যেখানে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রায় ৪০ টি সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেয়। সমাপনী বক্তৃতা দেন পরিবেশবিদ ও চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র আবু নাসের খান, প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এবং বাটা’র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।