News
তামাক নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের নীতিতে যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না হয় সেজন্য বিএটিবি’র বোর্ড থেকে সচিবদের দ্রুত বেরিয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি। ৩০ নভেম্বর ২০২২ বিকেল ৩টায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি কনফারেন্স রুমে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও ইনিশিয়েটিভ ফর পাবলিক হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইপিএইচআরসি) এ যৌথভাবে আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির সিএসআর : মিথ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মাননীয় মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, তামাক কোম্পানির এসব কার্যক্রম আমাকে বিব্রত করে। যেখানে সরকার প্রধান পরিষ্কারভাবে তামাক মুক্ত করার ঘোষণা করেছেন সেখানে তামাক কোম্পানির প্রচালনা মেনে নেয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট মানে আমাদের সবার কমিটমেন্ট। ফলে যারা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা এটা থেকে বেরিয়ে আসার সেফ এক্সিট পয়েন্ট খুঁজে বের করতে সহায়তা করুন। বিএটিবিতে সরকারের একেবারেই সামান্য শেয়ার আছে। আমি এটা প্রত্যাহারের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে মানি ট্রান্সফারের বিষয়টি শুধু তামাক খাত নয় অন্যান্য খাতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। নবম পঞ্চবার্ষিকীতে কীভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা যায় সেটা নিয়ে সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। ‘তামাক কোম্পানির সিএসআর, মিথ ও বাস্তবতা : বিএটিবি’র ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণার ফল উপস্থাপনের সময় তিনি বলেন, বছরে মাত্র ৬ কোটি টাকা সিএসআর ব্যয় করে ফলাও করে প্রচার করে বিএটিবি। সরকার যখন তামাক নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন সিএসআরে ব্যয় বৃদ্ধি করে বিএটিবি। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৬২টি দেশ সিএসআর নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তামাক কোম্পানি নামে বেনামে কৌশলে তাদের সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী (গাইবান্ধা-১) বলেন, আমি যেসব পলিসি নিয়ে কাজ করছি সেগুলো সরকারের জন্য খুবই দরকারি হলেও এসব খাত তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা ট্যাক্স নিয়ে কথা শুনতে চায় না। আসলে রাষ্ট্র, সরকার যদি পরিবর্তন হতে না চায় তাহলে সিভিল সমাজ কোনোকিছু নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। তামাকের বিরুদ্ধের আমাদের যে প্রচেষ্টা সেটা আসলে অসম যুদ্ধ। আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটা পূরণ করবো নাকি করবো না? আমরা কি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সারাবিশ্বের কাছে লজ্জিত দেখতে চাই? যদি না চাই তাহলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। করোনার সময় স্বাস্থ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতনৈক্য আমরা দেখেছি। এটা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহর করে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, যখন সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন তামাক কোম্পানি সিএসআর বাড়িয়ে দেয় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফাইন্ডিংস। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে এনটিসিসি ইতোমধ্যেই একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের তামাকমুক্ত দেশ গড়ায় সহায়তা করা।
অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানির রাজস্ব দেয়া নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি হয়। এ খাত থেকে টাকা আসলেও জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তামাকের বিকল্প খাত থেকে রাজস্ব আয় করতে সরকারকে নতুন খাতের খোঁজ করতে হবে।
এসময় আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, আমরা ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বললে তামাক কোম্পানি নানা ধরনের তথ্য প্রচার করে। সিএসআর নিয়ে প্রচারণা বাড়ায়। তাদের ব্যবসা প্রতিবছর বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
অন্যদিকে তামাক বিরোধী নারী জোটের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আকতার বলেন, তামাক কোম্পানি রাজস্ব ও সিএসআর নিয়ে নয়ছয় করে সেটা প্রমাণিত। তামাক কোম্পানিতে সচিবদের থাকা লজ্জার। জনগণের টাকায় যাদের বেতন হয় তারা কীভাবে তামাক কোম্পানিতে থাকতে পারে। আমরা সরকারের কাছে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার ও সচিবদের নিয়োগ বন্ধ করার দাবি জানাই।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের বাংলাদেশের হেড অব প্রোগ্রামস শফিকুল ইসলাম বলেন, বিএটিবির বোর্ডে বিভিন্ন সচিবকে দেখে আমি বিব্রত বোধ করছি। কারণ সচিবরা বোর্ডে থেকে তামাক নীতিতে বড়ো ধরনের প্রভাব ফেলছে। ফলে অতিদ্রুত সচিবদের হস্তক্ষেপ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।