খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ দুষণ রোধে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। তামাক চাষ অগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভান্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ, পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোয়া রন্ধে রন্ধে।

তামাক চাষ শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, এই বিষবৃক্ষ চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপনন সকল ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জনসাধারণকে। তামাক পাতা উঠানোর মৌসুমে বাড়ীর নারী, পুরুষ শিশু সকলে একসাথে মাঠে কাজ করতে হয়। এসময় শিশুরা স্কুল কামাই করে তাদের অবিভাবকদের সাথে মাঠে কাজ করে। ফলে তামাক চাষীদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে তাদের শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ রাসায়নিক ও কীটনাশক মাটির উর্ব্বরতা হ্রাস, পানি ধারণ ক্ষমতা নষ্ট এবং ক্ষয় বৃদ্ধি করছে। এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী, পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নদী ও জলাশয়ের ঢালু উর্বর জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ করায় এ জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক গিয়ে নদী-জলাশয়ের পানিতে মেশায় সে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকগুলো পানি সাথে মিশে গিয়ে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট করছে।

তামাক পাতা শুকানোর সময় উক্ত এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কাঠ, তুষ বা খড় পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। পার্বত্য এলাকায় তামাক পাতা শুকানোর জন্য ব্যাপকভাবে বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে, বনভূমিকে ধ্বংশ করছে। তামাক চাষ করার ফলে কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা থাকে। গবেষনায় দেখা গেছে, তামাক চাষী ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বার্জার্স এবং গ্রীণ টোব্যাকো সিকনেস (GTS) ব্যাপকভাবে লক্ষনীয়। এক গবেষনায় দেখা গেছে যে, টানা কয়েকদিন তামাক পোড়ানোর পর অনেক কৃষক এত বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তারা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তামাক পোড়ানো শেষে কৃষককের বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, শারীরিক দূর্বলতা দেখা যায় ।

বিগত অর্থবছরে কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে তামাক (আন-ম্যানুফ্যাকচার্ড) রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তামাক চাষের জন্য ঋণ প্রদান বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তথাপিও তামাক চাষ অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

  • খাদ্য সংকট মোকাবেলায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন।
  • তামাক চাষের প্রেক্ষিতে দখল হয়ে যাওয়া খাদ্য শষ্যের জমিতে, খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের সহযোগিতা প্রদান।
  • তামাষ চাষ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ ক্ষতি নিরূপনে গবেষণা সম্পন্ন।
  • তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়ায় শিশুদের অংশগ্রহণ বন্ধ করা।
  • তামাক শুকানোর প্রক্রিয়ায় পরিবেশ দুষণ ও বৃক্ষ নির্ধণ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ
  • তামাক চাষের জন্য সহযোগিতা ও সুবিধা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ
  • কৃষকদের তামাক চাষ হতে বিরত রাখতে প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা