তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের ৯০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের প্রয়োজনীয়তা

ফারহানা জামান লিজা। প্রারম্ভিক: বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে বদ্ধপরিকর। ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও তামাক বিরোধী সংগঠন গুলো তামাক নিয়ন্ত্রনে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

তামাক ব্যবহারের ফলে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারের ক্ষতি এতটাই মারাত্মক যে, তা গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১.৪ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে মারা যায়১ এবং ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে২। এছাড়া ১৫ লাখের অধিক প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ তামাক সেবনের কারণে এবং ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধুমপানের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে দেশে প্রায় ৪ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। ২০১৮ সালে তামাকের কারণে মৃত্যুর হার দেশের মোট মৃত্যুর ১৩.৫ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ (মোট জনসংখ্যার ২০.৬% মানুষ) ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহার করেন। যার মধ্যে ১৬.২% পুরুষ এবং ২৪.৮% মহিলা৩। ধূমপানের ধোঁয়াতে প্রায় ৭ হাজার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা বিভিন্ন রোগ সৃষ্টির জন্যে দায়ী এবং এর মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী: কথায় আছে, একটি ছবি হাজার কথা বলে। যে দেশে যত বড় ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করা হয়, সেই দেশে তামাকের ব্যবহার দ্রুত কমছে এবং সেদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে তত বেশি এগিয়ে। এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) এর আর্টিকেল ১১তে সর্বপ্রথম সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রণয়ন করা হয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গচঙডঊজ পলিসি প্যাকেজ এর ড= ডধৎহ ধনড়ঁঃ ঃযব ফধহমবৎ ড়ভ ঃড়নধপপড় সেকশনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ সংশোধন করেছে এবং ২০১৫ সালে সংশোধিত আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। সংশোধিত আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ হতে সকল সকল তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়িত হয়।

সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রয়োজনীয়তা: সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী তামাক সেবনের কারনে সৃষ্ট রোগ স¤পর্কে সচেতন করে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী একটি অন্যতম কার্যকর পন্থা। গবেষণায় দেখা যায়, একজন ধূমপায়ী প্রতিদিন প্রায় ২০ বার এবং বছরে প্রায় ৭৩০০ বার সিগারেটের প্যাকেট দেখে থাকে। ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে এবং অধূমপায়ীদের ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে।

হেল্থ প্রমোশন ফাউন্ডেশন কতৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করার পর থেকে সেখানে ২৮% ধূমপায়ী ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, ১৪% ধূমপায়ী শিশুদের সামনে এবং ১২% ধূমপায়ী গর্ভবতী নারীদের সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থেকেছে। ব্রাজিল ২০০২ সালে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৩৬% ধূমপায়ীকে ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী সরকার প্রতি ২ বছর পর পর সতর্কবাণী পূণ:মুল্যায়ন ও পরিবর্তন করতে পারবে।

সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী কেমন হওয়া উচিৎ: এফসিটিসি আর্টিকেল ১১ মোতাবেক সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৫০ শতাংশ এর বেশি জায়গা জুড়ে থাকা জরুরী। কারন বড় ছবি বেশি দৃষ্টিগোচর হয় এবং পরিষ্কার বোঝা যায়। তাছাড়া এটি অবশ্যই মোড়কের প্রধান স্থানে থাকা উচিত যাতে করে সহজে পরিলক্ষিত হয়। সাথে সাথে লিখিত সাস্থ্য সতর্কবাণী ও বড় অক্ষরে দেওয়া উচিত। এতে করে তামাক কো¤পানীর ব্রান্ড প্রমোশনের হারও কমে যায়।

বাংলাদেশের আইনে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীঃ বাংলাদেশের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩) এর ধারা ১০ অনুযায়ী, “তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট , মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পার্শ্বে মূল প্রদর্শনী তল বা যে সকল প্যাকেটে দুইটি প্রধান পার্শ¦দেশ নাই সেই সকল প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অনূন্য শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমান স্থান জুড়িয়া তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে, রঙ্গিন ছবি ও লেখা সম্বলিত, স্বাস্থ্য সম্পকিত সতর্কবাণী, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, বাংলায় মূদ্রণ করিতে হইবে।” এ আইনের বিধিমালায় (২০১৫) ধোঁয়াযুক্ত তামাক পণ্যের জন্য ৭টি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের জন্য ২টি সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী প্রদত্ত এই ৯টি ছবি তিন মাস পর পর পরিবর্তন করতে হবে। এবং সরকার প্রতি ২ বছর পরপর এই ছবিসহ সতর্কবাণী পূণমূল্যায়ন ও পরিবর্তন করবে।

বাংলাদেশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর অবস্থা: টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষনা কেন্দ্র, যা তামাক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছে। টিসিআরসি ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রনয়ণের পর হতেই সারা দেশ হতে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের পরিস্থিতি নিরুপনের জন্য তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করে আসছে এবং গবেষণার ফলাফল নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে।

টিসিআরসির গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তামাক কোম্পানিগুলো মোড়কের ৫০% এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করছে না। এর অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে সতর্ক। তারা জানে যে, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী তামাক ব্যবহারকারীদের সতর্ক করার ক্ষেত্রে এবং মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে দ্রুত কাজ করবে। তাই সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবানী মুদ্রণে তামাক কোম্পানিগুলো প্রথম থেকেই গড়িমসি করে আসছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টালবাহানা ও তদবিরের মাধ্যমে তারা আইন অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতকর্বানী মোড়কের উপরে না দিয়ে নিচে প্রদান করছে। অর্ন্তবর্তীকালীন এ নির্দেশনা দীর্ঘ ৩ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হবার পরও বহাল রয়েছে।

বাংলাদেশ ২০১৬ সাল হতে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করছে কিন্তু, বাংলাদেশ এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) স্বাক্ষরকারী ১ম দেশ হওয়া সত্তেও¡ বাংলাদেশে মাত্র ৫০ শতাংশ সচিত্র সতর্কবাণী প্রদান করা হয়। যদিও টিসিআরসির গবেষণায় দেখা গেছে ৮৮ শতাংশ তামাকপণ্যেই আইন অনুযায়ী ছবি প্রদান করা হচ্ছে না। যেখানে নেপাল ও ভারত সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে গেছে, সেখানে এফসিটিসিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর এহেন অবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের ভাবধারা ক্ষুণœ করছে। তাই জনস্বার্থ বিবেচনায় বাংলাদেশের তামাকজাত মোড়কের ৯০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ একান্ত প্রয়োজন।

সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী- বৈশ্বিক অবস্থা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাকজাত দব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করা হয়। কানাডিয়ান ক্যান্সার সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট (২০১৬)-এর তথ্যানুযায়ী ১০৫টি দেশে ইতিমধ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রয়োগ হচ্ছে। যার মাধ্যমে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৮ ভাগ মানুষ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আওতায় এসেছে। এর মধ্যে আফ্রিকান অঞ্চলের কেনিয়া, নামিবিয়া, মাদাগাসকার-সহ মোট ৬টি, আমেরিকান অঞ্চলের কানাডা, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ মোট ১৮টি, মধ্যপ্রাচ্চের ইরান, বাহরাইন, কাতারসহ মোট ১৩টি, এশিয়া অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ মোট ৭টি, ইউরোপিয়ান অঞ্চলের আরমেনিয়া,অস্ট্রিয়া, বেলজিয়ামসহ মোট ৪২টি এবং পশিচামাঞ্চলের অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভিয়েতনামসহ মোট ১৯টি দেশের সমন্নয়ে মোট ১০৫টি দেশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করছে।

বিশ্বে বড় আকারে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানকারী দেশসমূহ: ২০০১ সালে সর্বপ্রথম কানাডা তাদের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করেছে। বর্তমানে নেপাল তামাকজাত পন্যের মোড়কের উভয় পাশে ২০১৫ সাল থেকে ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে। ভানুয়াতু তামাকপন্যের মোড়কের উভয় পাশে ২০১৭ সাল থেকে ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রয়েছে। পাশাপাশি ভারত এবং থাইল্যান্ড যথাক্রমে ২০১৬ এবং ২০১৪ থেকে মোড়কের উভয় পাশে ৮৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় তামাকপন্যের সামনে ৭৫ শতাংশ এবং পেছনে ৯০ শতাংশ; শ্রীলংকা ও উরূগুয়ে মোড়কের উভয় পাশে ৮০ শতাংশ; ব্রƒনেই, কানাডা, লাও পিডিআর ও মায়ানমার মোড়কের উভয় পাশে ৭৫ শতাংশ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করছে।

সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বৃদ্ধিকারী দেশসমূহ: ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট ২০১৪ এবং ২০১৬ এর মধ্যে বিশেষ কিছু পার্থক্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, গড়ে নেপালে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ, ভারতে ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৫ শতাংশ (বিশ্ব তালিকায় ১৩৬তম থেকে উন্নীত করে ৩য়), মায়ানমারে শুরু থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ, লাও পিডিআরে ৩০ শতাংশ লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী থেকে ৭৫ শতাংশ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী, উরুগুয়েতে ৮০ শতাংশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মোট ২৮ টি দেশে নতুন করে তামাকপন্যের মোড়কের উভয় পাশে ৬৫ শতাংশ এবং ২২ টি দেশে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের মধ্যে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী অন্তর্ভুক্তিকরন-সহ আদর্শ মোড়কীকরনে ব্যপক পরিবর্তন।

বাংলাদেশে সচিত্র ম্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯০ শতাংশ করার প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রনের ১৮ মাস পর টিসিআরসি’র আরেকটি গবেষণায় উঠে আসে, তামাকপণ্যের মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর পরিমাণ ছোট হওয়ায় এবং বিড়ি ও চর্বনযোগ্য তামাকের প্যাকেটের সাইজের ভিন্নতাসহ বিভিন্ন কৌশলের কারণে তা তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে যতটা প্রভাব ফেলার কথা তা ফেলতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সরকারের আইন প্রনয়েনর মূল লক্ষ্য ব্যহত হচ্ছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলোর ধূর্ততা ও অপকৌশল মানুষকে দিনদিন শুধু মৃত্যুর মুখেই ঠিলে দিচ্ছে।

আদমশুমারি (পপুলেশন সেনসাস)- ২০১১ এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই (৪৯ শতাংশ) অশিক্ষিত। যাদের লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বোধগম্য হয়না। কিন্তু, এই শ্রেনীর মানুষের মধ্যেই তামাক সেবনের প্রবনতা সব থেকে বেশি। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী তাদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।

এছাড়া কোম্পানিগুলো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের ঠিক আগে থেকেই ছবি উপরে বা নিচে দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে আসছে। ৯০% সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী এর স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করলে যে বিষয়টি উঠে আসে তা হলো, মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর পরিধি বৃদ্ধি করা। যা এখনই করা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। সকল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ করা এখন সময়ের দাবী।

লেখক: গবেষণা সহকারী ও প্রকল্প কর্মকর্তা, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

তথ্যসূত্র:
১দি টোব্যাকো এ্যাটলাস (The Tobacco ATLAS, 16th Edition)

২বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (WHO)
৩গ্লোবাল এ্যাডাল্ট ট্যোবাকো সার্ভে, ২০১৭ (GATS 2017)