তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে গনমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম
সরকারের উদ্দেশ্য জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাকের ব্যবহার কমানো, অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন ও ব্যবসার প্রসার। এক্ষেত্রে সরকার ও তামাক কোম্পানিগুলোর নীতি সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকার ২০৪০ সাল এর মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং সেই লক্ষ্যে গ্রহণ করছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু যেসকল কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অভিযাত্রা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম তামাক কেস্পানিগুলোর প্রভাব। কোম্পানিগুলো সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর বেড়ে দাড়িয়েছে ৭২। গতবছরের তুলনায় এই হস্তক্ষেপের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

উক্ত বিষয়ের উপর গুরত্বারোপ করে ০৪ জানুয়ারী, ২০২২ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর আয়োজনে “তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ: গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক একটি জুম ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবকন্ঠের সহকারী সম্পাদক দীপংকর গৌতম, ভোরেরর কাগজের সিনিয়র রিপোটার সেবিকা দেবনাথ, দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র এবং শেয়ার ব্রীজের সিনিয়র রিপোর্টার মাসুম বিল্লাহ।দীপংকর গৌতম বলেন, তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে অসুস্থ হবার পর মানুষের শরীরে জীবন রক্ষাকারী ওষুধগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে হলে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, তামাক ক্ষতিকর পণ্য হলেও এর ভয়াবহ দিক গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয় না বিধায় তামাক কোম্পানিগুলো সুবিধা ভোগ করেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে সামাজিক সংগঠন সম্পৃক্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রনে কাজ করলে তামাক নিন্ত্রণে কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গতি তরান্বিত হবে।

নিখিল ভদ্র বলেন, তামাকের কারণে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময় গণমাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত রিপোর্ট ছাপানো কষ্টকর ছিলো। বর্তমানে সময়ের পরিবর্তনে সচেতনতা বেড়েছে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমগুলো সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিবাচক পরিবর্তনের এই ধারাকে এগিয়ে নিতে হলে সামাজিক দায়বদ্ধতার আড়ালে তামাকের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। তামাকের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।

সেবিকা দেবনাথ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের ধীরগতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা এবং আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণের সাথে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় মালিক পক্ষের সাথে তামাক কোম্পানীগুলো সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। খুব সচেতনভাবে লক্ষ্য না করলে তামাক নিয়ন্ত্রণের পক্ষের শক্তিগুলোও বিভ্রান্তকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলিকে আরো সর্তক থাকতে হবে।

মাসুম বিল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব সাস্থ সংস্থার এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রনে সরকার বদ্ধপরিকর। বাজেটের পূর্বে তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রেরণ করে। তিনি সুপারিশ করেন, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং তামাকের জটিল কর ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সহজ করা প্রয়োজন। সার্বিক আলোচনায় স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য উৎপাদনকারী তামাক কোম্পানীগুলোকে পুরুস্কার প্রদাণ থেকে বিরত থাকার বিষয়টিও উঠে আসে।