সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করল বিআইডব্লিউটিএ

পাবলিক প্লেস ও নৌ-পরিবহন ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে জনগণকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক হতে রক্ষা করতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশ, আনসারসহ সকল নৌ-পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনদের ঐকান্তিক সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বক্তারা। তাঁরা বলেন পাবলিক প্লেস ও নৌ-পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত হলে জনগণ উপকৃত হবে। ২৭ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র আয়োজনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি-ডাস্, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-বাটা এবং দাতাসংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর যৌথ সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ-সদরঘাট, ঢাকার সম্মেলন কক্ষে “নৌ-পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের গুরূত্ব ও করণীয়”- শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিআইডব্লিউটিএ-সদরঘাট, ঢাকার মূখ্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির, যুগ্ম পরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ’র সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ডাস্’র প্রোগ্রাম অফিসার মো: রবিউল আলম লিটন এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডাস্ তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট লীড দোয়া বখশ্ শেখ, শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-বাটা’র এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এবং ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডাস্’র পলিসি এনালিস্ট আসরার হাবীব নিপু। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএ’র প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক কাজী ওয়াকিল নেওয়াজ, বিআইডব্লিউটিসি বাণিজ্য বিভাগের ডিজিএম (পিএস ইউনিট) নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী, মেডিকের অফিসার ডা: নন্দিনী আর্চায্য, নৌ পুলিশ সদরঘাট নৌ থানার এসআই নকীব আরজুল হক, মানস’র সিনিয়র কমিউনিকেশন্স অফিসার আবু রায়হান ও ডাস্’র সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু।

ডাস্ জরিপে দেখা যায়, প্রতিদিন সদরঘাট হতে প্রায় ৭০ টি লঞ্চ দেশের দূর দূরান্তের দিকে যাতায়াত করে যেখানে লঞ্চগুলি প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বহন করে যারমধ্যে ৪,৫০০ যাত্রী বিড়ি-সিগারেট ক্রয় করে টার্মিনালে অবস্থিত বিভিন্ন দোকান ও লঞ্চের মধ্যে অবস্থিত স্থায়ী দোকান হতে (সূত্র: বিআইডব্লিউটিএ, বিড়ি-সিগারেট বিক্রিত হকার্স, ঢাকা নদী বন্দর, সদরঘাট, ঢাকা)। অর্থাৎ প্রতি ৪ জন যাত্রীর মধ্যে ১ জন যাত্রী ধূমপান করে। ফলে দেখা যায় যে, প্রতিদিন একজনের ধূমপানের ফলে ৪ জন অর্থাৎ শতকরা ২৫ ভাগের জন্য শতকরা ৭৫ ভাগ যাত্রী পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হচ্ছে। এমতবস্থায়, পরোক্ষ ধূমপান প্রতিরোধে লঞ্চ ও টার্মিনালের অভ্যন্তরে বিড়ি-সিগারেটসহ অন্যন্য তামাকজাত পণ্য বিক্রি ও ধূমপান অবিলম্বে বন্ধের আহবান জানান বক্তারা।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালে এনটিসিসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং সচেতনতামূলক কাজ করে আসছে। নৌ-পরিবহনের তুলনায় সড়ক পরিবহনে তামাক ব্যবহারের হার কম। তাই নৌ-পরিবহন সেক্টরকে এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। যারা দায়িত্বে আছে বিশেষ করে নৌপুলিশ এবং লঞ্চ ও ফেরী ইনচার্জ তারা যদি এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যেমন- ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা,২/১ টা মোবাইল কোর্ট করা ইত্যাদি। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অপরাধীকে জরিমানা ও কমপক্ষে ১ দিনের জেল দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নৌপুলিশ পরিদর্শককে পরামর্শ দেন।
সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, নৌপরিবহন এ ধূমপান আইন বাস্তবায়নে একটু কাঠামোগত পার্থক্য আছে। লঞ্চে আলাদা আলাদা রুম বা ক্যাবিন থাকে বিধায় এখানে আইন বাস্তবায়ন করা কষ্টকর। একজন ধূমপায়ী ব্যক্তির মাসে যদি ৩০০০/= টাকা খরচ হয়, তাহলে সে ২০ বছরে ২০-২৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেইসাথে রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা খরচ তো আছেই। অথচ দেখা যায় যে, সেই ব্যক্তি সন্তানের স্কুলের বেতন দিতে পারে না। পরিশেষে তিনি তাঁর অফিস এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালকে ধূমপানমুক্ত ঘোষনা করেন। তিনি বলেন যে, এ বিষয়ে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পান-বিড়ি সিগারেট বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ০% টলারেন্সের মধ্যে যাতে থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন-বিআইডব্লিউটিসি, বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, নৌ-পুলিশ, আনসার, বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (রেজি:-বি-২১৭৬, সিবিএ), সাংবাদিক, লঞ্চ মালিক প্রতিনিধিসহ বিআইডব্লিউটিএ, বাটা ও ডাস্’র কর্মীবৃন্দ।