সমন্বিত পদক্ষেপেই পারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নীতি সুরক্ষা জরুরী
সরকারের উদ্দেশ্য জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাকের ব্যবহার কমানো, অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন ও প্রসার। তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে সরকার ও তামাক কোম্পানিগুলোর নীতি সম্পূর্ণ বিপরীত। তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের 
তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা কৌশলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তামাক নিয়ন্ত্রণে অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে আইন, বিধিমালা প্রণয়ন ও বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে হলে তামাক কোম্পানীর প্রভাব প্রতিহতকরণে এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।  
এই বিষয়ের উপর গুরত্ব আরোপ করে আজ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ সোমবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর আয়োজনে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক জুম ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কনট্রোল মো. হাসান শাহরিয়ার, স্টপ’র বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট ফাহমিদা ইসলাম, ভয়েস এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জায়েদ সিদ্দিকী এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান।

জনাব হাসান শাহরিয়ার তার বক্তব্যে বলেন, ২০৪০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রনালয় রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের তালিক থেকে তামাক কো¤পানির নাম থেকে বাদ দিয়েছে। টোবাকো ইনডেক্সের তথ্য মতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সূচক ছিল ৬৮ তম এবং ২০২১ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৭২ তম। করোনা মহামারীর মধ্যে তামাক কো¤পানি তাদের ব্যাবসা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তামাক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে ছাড় পেয়েছে। তিনি জেটিআই ব্যাবসা সম্প্রসারণ করার জন্য কূটনীতিক সুবিধার আশ্রয় নিয়েছে। তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ বন্ধে তামাক কো¤পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ, সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং আর্টিকেল ৫.৩ এর বাস্তবায়ন করতে সুপারিশ করেন।

ফাহমিদা ইসলাম বলেন, করোনা মহামারী দেশে ও দেশের বাহিরে তামাক কো¤পানির জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আর্বিভূত হয়। এই 

সুযোগটিকে তারা ব্যাবসা সম্প্রসারণের মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করেছে। তিনি বলেন, আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভারতের ১৪টি প্রদেশে ইতোমধ্যে এফসিটিসি আরটিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে।  তিনি আন্ততর্জাতিক বিভিন্ন ইতিবাচক উদাহরণ তুলে ধরেন এবং কো¤পানির অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

জায়েদ সিদ্দিকী বলেন, ঢাকা শরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে তামাক ক¤পানি তাদের ব্যাবসা প্রসারণের জন্য বিজ্ঞাপন ও উপঢৌকন এবং আর্থিক সুবিধা দিচ্ছে। যার ফলে একদিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ব্যহত হচ্ছে অপরদিকে রেষ্টুরেন্টে আগত তরুণরা তামাক ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য এতে দারুনভাবে ব্যহত হচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে রেস্টুরেন্টগুলোকে শতভাগ বিজ্ঞাপন ও ধূমপানমুক্ত করা জরুরী।


ওয়েবিনারটি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ফেসবুক পেইজ হতে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।সৈয়দা অনন্যা রহমান তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল বেশ কয়েক বছর আগে এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে একটি গাইড লাইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলো। দীর্ঘদিন ধরে গাইডলাইনটির কার্যক্রম থেমে আছে। কিন্তু তামাক কোম্পানীগুলোর নীতিতে প্রভাব বিস্তার থেমে নেই। কোভিড ১৯ এর কারনে সৃষ্ট মহামারীর সময়ও তারা বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পাশাপাশি জাপান টোব্যাকো পুরোদমে ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছে। বাংলাদেশে তামাক চাষের উন্নয়নে নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও পুরাতন কিছু আইনে তামাক কোম্পানীর জন্য সুবিধা বিদ্যমান রয়ে গেছে। এ বিষয়গুলো সংশোধন করে যুযোপযোগী করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।